ইলেকট্রন আসক্তি কী?
ইলেকট্রন আসক্তি (Electron Affinity) হলো কোনো পরমাণু বা আয়ন যখন একটি অতিরিক্ত ইলেকট্রন গ্রহণ করে তখন যে শক্তি নিঃসৃত বা শোষিত হয় তার পরিমাণ। সহজভাবে বলতে গেলে, এটি একটি পরমাণুর ইলেকট্রন গ্রহণ করার প্রবণতা বা ইচ্ছাশক্তি বোঝায়। ইলেকট্রন আসক্তি মৌলিক রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা নির্ধারণ করে কোন মৌলটি কতটা সক্রিয়ভাবে ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে এবং তার আয়ন তৈরি করার ক্ষমতা কতটা। এটি শুধুমাত্র একটি পরিমাণ নয়, বরং রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া, যৌগ গঠন এবং মৌলের স্থিতিশীলতা বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইলেকট্রন আসক্তি পরমাণুর ইলেকট্রন গ্রহণ করার ক্ষমতার মাপকাঠি। যখন কোনো পরমাণু অতিরিক্ত ইলেকট্রন গ্রহণ করে, তখন তার নিউক্লিয়াস ও বিদ্যমান ইলেকট্রনদের মধ্যকার আকর্ষণ শক্তি এই নতুন ইলেকট্রনকে ধরে রাখে। যদি এ প্রক্রিয়ায় শক্তি নিঃসৃত হয়, তাহলে সেটি নেগেটিভ ইলেকট্রন আসক্তি হিসেবে গণ্য হয়। অন্যদিকে, যদি শক্তি শোষিত হয়, অর্থাৎ ইলেকট্রন যোগ করতে শক্তি প্রয়োজন হয়, তাহলে এটি পজিটিভ ইলেকট্রন আসক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। সাধারণত হ্যালোজেনের মতো মৌলগুলোর ইলেকট্রন আসক্তি সর্বোচ্চ হয়, কারণ তারা পূর্ণ ভ্যালেন্স শেল অর্জনের জন্য অতিরিক্ত ইলেকট্রন গ্রহণে স্বাভাবিকভাবে উৎসাহী।
-
সংজ্ঞা: ইলেকট্রন আসক্তি হলো নিরপেক্ষ পরমাণুতে অতিরিক্ত ইলেকট্রন যোগ করার সময় শক্তি নিঃসৃত বা শোষিত হওয়ার পরিমাণ।
-
একক: কিলোজুল প্রতি মোল (kJ/mol) বা ক্যালরি প্রতি মোল।
-
ধরন:
-
নেগেটিভ ইলেকট্রন আসক্তি: শক্তি নিঃসৃত হয়; পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণে সক্রিয়।
-
পজিটিভ ইলেকট্রন আসক্তি: শক্তি শোষিত হয়; ইলেকট্রন গ্রহণ করতে শক্তি লাগে।
-
-
Periodic Table-এ প্রবণতা:
-
উপর থেকে নিচে কমে যায়, কারণ বড় পরমাণুর নিউক্লিয়াস আকর্ষণ কম।
-
বাম থেকে ডানদিকে বৃদ্ধি পায়, কারণ ছোট পরমাণুতে নিউক্লিয়াস শক্তিশালীভাবে ইলেকট্রনকে আকৃষ্ট করে।
-
ইলেকট্রন আসক্তি মৌলগুলোর রাসায়নিক প্রতিক্রিয়াশীলতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। হ্যালোজেন যেমন ক্লোরিন (Cl) ইলেকট্রন গ্রহণে অত্যন্ত সক্রিয়, যার ইলেকট্রন আসক্তি প্রায় −৩৪৯ kJ/mol। অন্যদিকে, নিষ্ক্রিয় গ্যাস যেমন হেলিয়াম (He) ইলেকট্রন গ্রহণে কম সক্রিয়, এবং এতে পজিটিভ ইলেকট্রন আসক্তি দেখা যায়। ধাতব মৌলগুলোর ইলেকট্রন আসক্তি তুলনামূলকভাবে কম, তাই তারা ইলেকট্রন ছাড়তে বেশি উৎসাহী এবং আয়ন তৈরি করে।
টেবিল: বিভিন্ন মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি
| মৌল | ইলেকট্রন আসক্তি (kJ/mol) | মন্তব্য |
|---|---|---|
| ক্লোরিন (Cl) | −349 | অতিরিক্ত ইলেকট্রন গ্রহণে খুব সক্রিয় |
| অক্সিজেন (O) | −141 | শক্তি নিঃসৃত হয়; নেগেটিভ ইলেকট্রন আসক্তি |
| হেলিয়াম (He) | +48 | শক্তি শোষিত হয়; পজিটিভ ইলেকট্রন আসক্তি |
| নাইট্রোজেন (N) | −7 | তুলনামূলকভাবে কম নেগেটিভ ইলেকট্রন আসক্তি |
ইলেকট্রন আসক্তি শুধু মৌলগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে নয়, যৌগ তৈরির ক্ষেত্রে এবং রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার ধরণ বোঝার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, NaCl তৈরি হলে Na ইলেকট্রন ছাড়ে এবং Cl ইলেকট্রন গ্রহণ করে। Cl-এর উচ্চ ইলেকট্রন আসক্তি এটিকে অতিরিক্ত ইলেকট্রন গ্রহণে সক্রিয় করে এবং স্থিতিশীল আয়ন তৈরি করতে সহায়ক হয়।
-
ইলেকট্রন আসক্তি মৌলগুলোর রাসায়নিক প্রতিক্রিয়াশীলতা ও স্থিতিশীলতা নির্ধারণে সাহায্য করে।
-
এটি পরমাণুর আয়ন উৎপাদন ক্ষমতা এবং যৌগ গঠনের সম্ভাবনা বোঝায়।
-
উচ্চ ইলেকট্রন আসক্তি বিশিষ্ট মৌলগুলো নতুন যৌগ তৈরি করতে সক্রিয়, আর কম ইলেকট্রন আসক্তি বিশিষ্ট মৌলগুলো তুলনামূলকভাবে কম সক্রিয়।
-
Periodic Table-এ এর প্রবণতা বোঝার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মৌলগুলোর রাসায়নিক আচরণ পূর্বাভাস করতে পারে।
ইলেকট্রন আসক্তি হলো পরমাণুর এক মৌলিক বৈশিষ্ট্য, যা তার ইলেকট্রন গ্রহণ করার ক্ষমতা এবং রাসায়নিক প্রতিক্রিয়াশীলতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি Periodic Table-এর বিভিন্ন উপাদানের বৈশিষ্ট্য বোঝার জন্য অপরিহার্য এবং রাসায়নিক অধ্যয়নে মৌলিক ধারণা হিসেবে গণ্য হয়। ইলেকট্রন আসক্তি বোঝার মাধ্যমে শুধু মৌলগত বৈশিষ্ট্যই নয়, যৌগ তৈরির প্রকৃতি, আয়ন উৎপাদনের ক্ষমতা এবং রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার সম্ভাব্যতা নির্ধারণ করা সম্ভব। এটি মৌল, আয়ন এবং যৌগের রাসায়নিক স্বাভাবিকতা বিশ্লেষণে অপরিহার্য, তাই শিক্ষার্থীদের জন্য ইলেকট্রন আসক্তি সম্পর্কিত ধারাবাহিক জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।