বাংলা নববর্ষ অনুচ্ছেদ

Avatar
calender 22-10-2025

"বাংলা নববর্ষ"

বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশের মানুষের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও আনন্দঘন উৎসব। এটি বাংলা বছরের প্রথম দিন, অর্থাৎ “পহেলা বৈশাখ” নামে পরিচিত। এ দিনটি বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব হিসেবে সারা দেশে উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়। শহর থেকে গ্রাম—সব জায়গায় মানুষ নতুন পোশাকে, নতুন আনন্দে দিনটি উদ্‌যাপন করে।

বাংলা নববর্ষের সূচনা মোগল সম্রাট আকবরের সময় থেকে। কর সংগ্রহের সুবিধার জন্য তিনি নতুন বাংলা সাল প্রবর্তন করেন। কৃষকরা বছরের প্রথম দিনে জমিদারের কাছে খাজনা পরিশোধ করে “হালখাতা” খোলেন। সেই ঐতিহ্য এখনও ব্যবসায়ী সমাজে টিকে আছে। দোকানে নতুন খাতা খোলা হয় এবং ক্রেতাদের মিষ্টি খাওয়ানো হয়। এই দিনে সকাল থেকেই মানুষ বৈশাখী সাজে সেজে ওঠে। ছেলেরা পরে পাঞ্জাবি-পায়জামা, মেয়েরা পরে সাদা-লাল শাড়ি। ঢাকায় রমনার বটমূল থেকে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে “এসো হে বৈশাখ” গান দিয়ে নববর্ষকে বরণ করা হয়। এছাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রা, গ্রামীণ মেলা, পালাগান, হালখাতা, পান্তা-ইলিশ খাওয়া—সব মিলিয়ে দিনটি হয়ে ওঠে আনন্দময়। বাংলা নববর্ষ কেবল উৎসব নয়, এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐক্য ও ঐতিহ্যের প্রতীক। ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে এই দিন উদ্‌যাপন করে। এতে জাতিগত সম্প্রীতি ও মিলনের এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি হয়। তবে আধুনিক কালের ভোগবাদী প্রভাব অনেক সময় উৎসবের স্বকীয়তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। তাই আমাদের উচিত বাংলা নববর্ষের আসল চেতনা—অসাম্প্রদায়িকতা, মিলন ও মানবিকতার মূল্যবোধ—অক্ষুণ্ণ রাখা।

সবশেষে বলা যায়, বাংলা নববর্ষ বাঙালির আত্মপরিচয়ের দিন। এটি আমাদের মনে নবজাগরণের বার্তা আনে, পুরনো দুঃখভোলা নতুন সূচনার আহ্বান জানায়। পহেলা বৈশাখের এই আনন্দে বাঙালি খুঁজে পায় তার প্রাণের উচ্ছ্বাস ও ঐক্যের বন্ধন।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD