পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণ সুষম তরণের উদাহরণ কারণ এটি পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে ধাবমান বস্তুর উপর একটি নির্দিষ্ট ও ধ্রুব ত্বরণ প্রয়োগ করে, যার মান সবসময় প্রায় থাকে। অর্থাৎ, কোনো বস্তু যখন মুক্তভাবে নিচের দিকে পড়ে (free fall), তখন সেটি প্রতিটি সেকেন্ডে সমান হারে বেগ বৃদ্ধি পায় এবং এই সমান হারে বেগ পরিবর্তনের কারণেই অভিকর্ষজ ত্বরণকে সুষম তরণের উদাহরণ বলা হয়। এই ত্বরণ কেবলমাত্র পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের কারণে উৎপন্ন হয়, যা প্রত্যেক বস্তুর উপর একইভাবে ক্রিয়া করে, তাদের ভর নির্বিশেষে।
এখন বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো—
-
অভিকর্ষজ ত্বরণের সংজ্ঞা:
পৃথিবীর আকর্ষণ বলের কারণে কোনো বস্তুর উপর যে ত্বরণ ক্রিয়া করে তাকে অভিকর্ষজ ত্বরণ (Acceleration due to gravity) বলা হয়। এর প্রতীক g, এবং এর গড় মান প্রায় সুষম তরণের সংজ্ঞা:
যখন কোনো বস্তুর বেগ সমান হারে বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়, তখন সেই গতিকে সুষম তরণ (Uniform acceleration) বলা হয়। অর্থাৎ, প্রতি সেকেন্ডে বেগের পরিবর্তন সমান হলে সেটি সুষম তরণ।-
অভিকর্ষজ ত্বরণ কেন সুষম তরণ:
-
পৃথিবীর অভিকর্ষ বল একটি নির্দিষ্ট দিকে (পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে) ধ্রুব মানে কাজ করে।
-
কোনো বস্তু যখন মুক্তভাবে পড়ে, তখন সেটির বেগ প্রতিটি সেকেন্ডে একই হারে বৃদ্ধি পায়।
-
এই বৃদ্ধির হার (ত্বরণ) সর্বদা সমান থাকে, যতক্ষণ না বায়ুর বাধা উপেক্ষা করা হয়।
-
তাই বস্তুটি একটি সুষম তরণে পতনশীল হয়।
-
-
গাণিতিক প্রমাণ:
কোনো বস্তুর প্রাথমিক বেগ , সময় , ত্বরণ , এবং শেষ বেগ হলে —এখানে দেখা যাচ্ছে, বেগ v সময়ের সঙ্গে সরলরেখায় বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ g ধ্রুব। তাই এটি সুষম তরণ।
পতন দূরত্ব নির্ণয়ের সূত্র:
এখানে হলে —
অর্থাৎ সময়ের বর্গের সাথে পতন দূরত্ব বৃদ্ধি পায়, যা সুষম তরণের বৈশিষ্ট্য।
-
উদাহরণ:
যদি একটি পাথরকে ১০ মিটার উচ্চতা থেকে ফেলা হয় —-
প্রথম সেকেন্ড শেষে বেগ হবে
-
দ্বিতীয় সেকেন্ড শেষে বেগ হবে
-
তৃতীয় সেকেন্ড শেষে বেগ হবে
দেখা যাচ্ছে, প্রতি সেকেন্ডে বেগ সমান হারে (9.8 m/s) বৃদ্ধি পাচ্ছে।
-
-
অভিকর্ষজ ত্বরণের প্রকৃতি:
-
এটি সব বস্তুর জন্য সমান (বায়ু প্রতিরোধ উপেক্ষা করলে)।
-
এর দিক সবসময় পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে।
-
এটি একটি ধ্রুব মানের ত্বরণ, অর্থাৎ সুষম তরণের শর্ত পূরণ করে।
-
-
টেবিল আকারে তুলনা:
| বিষয় | সুষম তরণ | অভিকর্ষজ ত্বরণ |
|---|---|---|
| সংজ্ঞা | সমান হারে বেগ পরিবর্তন | পৃথিবীর আকর্ষণে সমান হারে বেগ পরিবর্তন |
| দিক | নির্দিষ্ট দিক | সর্বদা পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে |
| মান | ধ্রুব | প্রায় 9.8 m/s² |
| উদাহরণ | সমবেগে পতন | মুক্তভাবে পতনশীল বস্তু |
উপসংহার:
সারসংক্ষেপে বলা যায়, অভিকর্ষজ ত্বরণ সুষম তরণের উদাহরণ কারণ এটি একটি ধ্রুব ত্বরণ, যা সময়ের সঙ্গে বেগের সমান হারে পরিবর্তন ঘটায়। পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের কারণে মুক্তভাবে পতনশীল প্রতিটি বস্তু এই সুষম তরণে অংশগ্রহণ করে। তাই অভিকর্ষজ ত্বরণকে প্রকৃতির একটি আদর্শ সুষম তরণের উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।