বর্ণমালায় পূর্ণমাত্রা অর্ধমাত্রা ও মাত্রাহীন বর্ণের সংখ্যা কয়টি ও কী কী?
বাংলা বর্ণমালায় পূর্ণমাত্রা, অর্ধমাত্রা ও মাত্রাহীন বর্ণ হলো উচ্চারণ ও ধ্বনির ভিত্তিতে বিভক্ত তিনটি শ্রেণির বর্ণ, যা আমাদের ভাষার ধ্বনিগত গঠনকে নির্ধারণ করে। পূর্ণমাত্রা বর্ণ বলতে এমন বর্ণকে বোঝায় যেগুলো উচ্চারণে সম্পূর্ণ একমাত্রা নেয়, অর্ধমাত্রা বর্ণ সেইসব বর্ণ যেগুলোর উচ্চারণে অর্ধমাত্রা সময় লাগে, আর মাত্রাহীন বর্ণ বলতে বোঝায় এমন বর্ণ যেগুলোর উচ্চারণে স্বরধ্বনি অনুপস্থিত বা খুব ক্ষীণভাবে শোনা যায়। বাংলা ভাষার প্রতিটি বর্ণের উচ্চারণের ওপর নির্ভর করে এই বিভাজন নির্ধারিত হয়, যা ধ্বনিবিজ্ঞান এবং বানান ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এখন বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো—
-
পূর্ণমাত্রা বর্ণ:
পূর্ণমাত্রা বর্ণ হলো সেইসব বর্ণ যেগুলোর উচ্চারণে সম্পূর্ণ একমাত্রা সময় লাগে। অর্থাৎ উচ্চারণের সময় স্বরধ্বনি স্পষ্টভাবে শোনা যায়।
বাংলা বর্ণমালায় ১১টি পূর্ণমাত্রা বর্ণ রয়েছে, যা সবগুলোই স্বরবর্ণ।
পূর্ণমাত্রা বর্ণগুলো হলো:
অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔএদের প্রত্যেকটি উচ্চারণে সম্পূর্ণ স্বরধ্বনি ব্যবহৃত হয় এবং শব্দ গঠনে তারা স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হতে পারে।
যেমন— অমল, আশা, ইতি, ঊষা, এক, ঐক্য, ওজন, ঔষধ। -
অর্ধমাত্রা বর্ণ:
অর্ধমাত্রা বর্ণ হলো সেইসব বর্ণ যেগুলোর উচ্চারণে স্বরধ্বনির উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম এবং সময়ও অর্ধমাত্রার সমান। এগুলো সাধারণত ব্যঞ্জনবর্ণ এবং উচ্চারণে পূর্ণমাত্রার চেয়ে অর্ধেক সময় নেয়।
বাংলা ভাষায় মোট ৩৩টি অর্ধমাত্রা বর্ণ রয়েছে, অর্থাৎ ব্যঞ্জনবর্ণসমূহই অর্ধমাত্রা বর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
অর্ধমাত্রা বর্ণগুলো হলো:
ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, য, র, ল, শ, ষ, স, হউদাহরণস্বরূপ —
“কলম”, “ঘর”, “নদী”, “বই” ইত্যাদি শব্দে এই বর্ণগুলো উচ্চারণের সময় অর্ধমাত্রা সময় নেয়। -
মাত্রাহীন বর্ণ:
মাত্রাহীন বর্ণ হলো সেইসব বর্ণ যেগুলোর উচ্চারণে স্বরধ্বনি একেবারেই থাকে না বা খুব ক্ষীণভাবে উচ্চারিত হয়। এই বর্ণগুলোকে বলা হয় ব্যঞ্জন-সহায়ক বর্ণ বা অন্তঃস্থ ও যুক্ত বর্ণের ধ্বনি-সহায়ক বর্ণ।
বাংলা ভাষায় ৩টি মাত্রাহীন বর্ণ রয়েছে।
মাত্রাহীন বর্ণগুলো হলো:
ং, ঃ, ঁএগুলোকে বলা হয় অনুস্বার, বিসর্গ ও চন্দ্রবিন্দু, যা নিজেরা সম্পূর্ণ ধ্বনি না হয়ে অন্য বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে উচ্চারণে পরিবর্তন আনে।
উদাহরণস্বরূপ —-
সংগীত (এখানে “ং” দ্বারা “ঙ” ধ্বনি নির্দেশিত)
-
দুঃখ (এখানে “ঃ” দ্বারা “হ” ধ্বনি নির্দেশিত)
-
চাঁদ (এখানে “ঁ” দ্বারা নাসাল ধ্বনি প্রকাশিত)
-
-
সংক্ষেপে টেবিল আকারে:
| শ্রেণি | বর্ণের সংখ্যা | বর্ণসমূহ | বৈশিষ্ট্য |
|---|---|---|---|
| পূর্ণমাত্রা বর্ণ | ১১টি | অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ | উচ্চারণে সম্পূর্ণ একমাত্রা সময় লাগে |
| অর্ধমাত্রা বর্ণ | ৩৩টি | ক–হ পর্যন্ত ব্যঞ্জনবর্ণ | উচ্চারণে অর্ধমাত্রা সময় লাগে |
| মাত্রাহীন বর্ণ | ৩টি | ং, ঃ, ঁ | স্বরধ্বনি নেই বা খুব ক্ষীণভাবে উচ্চারিত হয় |
বাংলা বর্ণমালায় ১১টি পূর্ণমাত্রা, ৩৩টি অর্ধমাত্রা এবং ৩টি মাত্রাহীন বর্ণ আছে। পূর্ণমাত্রা বর্ণগুলো হলো স্বরবর্ণ, যা নিজে সম্পূর্ণ উচ্চারিত হয়; অর্ধমাত্রা বর্ণগুলো হলো ব্যঞ্জনবর্ণ, যা স্বরবর্ণ ছাড়া পূর্ণ উচ্চারণ পায় না; আর মাত্রাহীন বর্ণগুলো হলো বিশেষ ধ্বনিচিহ্ন, যেগুলো মূলত অন্য বর্ণের ধ্বনিকে পরিবর্তন বা সহায়তা করে। এই তিন প্রকার বর্ণের সম্মিলনেই বাংলা ভাষার ধ্বনিব্যবস্থা পূর্ণতা লাভ করেছে।