সূর্যের শক্তির উৎস কী?

Avatar
calender 07-11-2025

সূর্যের শক্তির মূল উৎস হলো পরমাণবিক সংযোজন বিক্রিয়া (Nuclear Fusion Reaction)। সূর্যের কেন্দ্রস্থলে প্রচণ্ড তাপমাত্রা (প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং অত্যধিক চাপের কারণে হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে হিলিয়াম গঠন করে। এই সংযোজন প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়, যা আলো ও তাপের আকারে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। সূর্যের এই শক্তিই পৃথিবীতে আলো, তাপ ও জীবনের উৎস।

সূর্য একটি গ্যাসীয় গোলক যা প্রধানত হাইড্রোজেন (প্রায় ৭০%) এবং হিলিয়াম (প্রায় ২৮%) দ্বারা গঠিত। এর কেন্দ্রস্থলে তাপ ও চাপ এতটাই বেশি যে সাধারণ অবস্থায় হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো একত্র হতে না পারলেও এখানে তারা একীভূত হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে বিশাল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় যা সূর্য থেকে ক্রমাগত নির্গত হয়ে আমাদের কাছে পৌঁছায়।

সূর্যের শক্তি উৎপন্ন হওয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

  • সূর্যের কেন্দ্রস্থলে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস বা প্রোটনগুলো একত্র হয়ে হিলিয়াম গঠন করে।

  • এই সংযোজন প্রক্রিয়াকে বলা হয় প্রোটন-প্রোটন চেইন বিক্রিয়া (Proton-Proton Chain Reaction)

  • সংযোজনের সময় কিছু ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, যা আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ E = mc² দ্বারা প্রকাশ করা যায়।

  • উৎপন্ন এই শক্তি সূর্যের অভ্যন্তর থেকে ধীরে ধীরে বাইরে এসে আলো ও তাপ আকারে পৃথিবীতে পৌঁছায়।

সূর্যের শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়াগুলো সংক্ষেপে

  • হাইড্রোজেন পরমাণু → সংযোজিত হয়ে → হিলিয়াম পরমাণু

  • হিলিয়াম গঠনের সময় কিছু ভর হারিয়ে যায় → তা শক্তিতে রূপান্তরিত হয়

  • এই শক্তি → বিকিরণ ও পরিবহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে → সূর্যের পৃষ্ঠে আসে

  • সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে → আলো, তাপ ও অন্যান্য বিকিরণ → মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে

সূর্যের শক্তি উৎপাদনের ধাপসমূহ (Proton-Proton Chain Reaction)

ধাপপ্রক্রিয়াউৎপন্ন ফলাফল
প্রথম ধাপদুটি প্রোটন যুক্ত হয়ে ডিউটেরিয়াম গঠন করেপজিট্রন ও নিউট্রিনো নির্গত হয়
দ্বিতীয় ধাপডিউটেরিয়ামের সঙ্গে আরেকটি প্রোটন যুক্ত হয়হিলিয়াম-৩ উৎপন্ন হয়
তৃতীয় ধাপদুটি হিলিয়াম-৩ যুক্ত হয়ে হিলিয়াম-৪ তৈরি করেদুটি প্রোটন পুনরায় নির্গত হয়
ফলাফলহিলিয়াম ও শক্তি উৎপন্ন হয়শক্তি আলো ও তাপ হিসেবে নির্গত হয়

সূর্যের শক্তি উৎপাদনের গুরুত্ব

  • সূর্যের শক্তি ছাড়া পৃথিবীতে কোনো জীবনের অস্তিত্ব থাকত না।

  • এই শক্তি উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাহায্য করে।

  • এটি পৃথিবীর আবহাওয়া, বৃষ্টি, তাপমাত্রা ও জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে।

  • সৌরশক্তি (Solar Energy) আজ মানবজাতির একটি বিকল্প শক্তি উৎস হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

  • সূর্যের বিকিরণ মহাকাশ ও গ্রহসমূহে আলো ও শক্তি সরবরাহ করে, যা সৌরজগতকে সক্রিয় রাখে।

উপসংহার

সবকিছু বিবেচনায় বলা যায়, সূর্যের শক্তির আসল উৎস হলো পরমাণবিক সংযোজন বিক্রিয়া, যেখানে হাইড্রোজেন একীভূত হয়ে হিলিয়ামে রূপান্তরিত হয় এবং ভরের একটি অংশ শক্তিতে পরিণত হয়। এই শক্তিই সূর্য থেকে আলো, তাপ ও বিকিরণ আকারে নির্গত হয়ে পৃথিবীতে জীবনের ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে। প্রকৃত অর্থে সূর্য হলো মহাবিশ্বের এক মহাশক্তির ভাণ্ডার, যার নিরবচ্ছিন্ন শক্তি বিকিরণেই আমাদের গ্রহে প্রাণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য টিকে আছে।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD