বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার মূলনীতি কয়টি ও কী কী?
বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা (Scientific Management) হলো এমন এক ব্যবস্থাপনা তত্ত্ব যা উনিশ শতকের শেষ দিকে ফ্রেডরিক উইনসলো টেলর (F. W. Taylor) প্রবর্তন করেন। এর মূল লক্ষ্য হলো উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, শ্রমের অপচয় হ্রাস এবং শ্রমিক ও ব্যবস্থাপকের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করা। টেলরের মতে, কাজ পরিচালনায় অনুমান বা অভ্যাস নয়, বরং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ প্রয়োগ করা উচিত। তিনি কাজের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য চারটি মৌলিক নীতি উপস্থাপন করেন যা আধুনিক ব্যবস্থাপনার ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।
বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার মূলনীতি
বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার মূলনীতি মোট চারটি—
কাজের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ (Science, not Rule of Thumb):
কোনো কাজ অভ্যাস বা অনুমানের ভিত্তিতে নয়, বরং বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সম্পাদন করা উচিত। কাজের প্রতিটি ধাপ বিশ্লেষণ করে সর্বোত্তম ও সময়সাশ্রয়ী পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। এতে শ্রমিকের শ্রম ও সময়ের অপচয় রোধ হয় এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
উদাহরণ: কোনো কাজ সম্পন্ন করার সর্বোত্তম পদ্ধতি নির্ধারণে সময় ও গতি বিশ্লেষণ (Time and Motion Study) করা।
শ্রমিক নির্বাচন ও প্রশিক্ষণ (Scientific Selection and Training of Workers):
শ্রমিকদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও মানসিক সক্ষমতার ভিত্তিতে নির্বাচিত করে তাদের বৈজ্ঞানিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। এতে শ্রমিক নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ হয়ে ওঠে, ভুলের পরিমাণ কমে এবং উৎপাদনের মান বৃদ্ধি পায়।
উদাহরণ: দক্ষ শ্রমিকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যন্ত্র পরিচালনায় পারদর্শী করা।
ব্যবস্থাপক ও শ্রমিকের সহযোগিতা (Harmony, not Discord):
টেলর বিশ্বাস করতেন, শ্রমিক ও ব্যবস্থাপকের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা বিরোধ নয় বরং পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। উভয়ে প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের জন্য একযোগে কাজ করলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং প্রতিষ্ঠানে স্থিতিশীলতা আসে।
উদাহরণ: ব্যবস্থাপক শ্রমিকদের সমস্যা বুঝে সমাধান দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা।
দায়িত্বের সমান বণ্টন (Equal Division of Work and Responsibility):
ব্যবস্থাপক ও শ্রমিকের দায়িত্ব ও কাজ বৈজ্ঞানিকভাবে ভাগ করে দেওয়া উচিত। ব্যবস্থাপক কাজের পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধান করবে, আর শ্রমিক সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। এতে উভয়ের দায়িত্ব স্পষ্ট হয় এবং ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়।
উদাহরণ: ব্যবস্থাপক উৎপাদনের মানদণ্ড নির্ধারণ করবে, আর শ্রমিক সেই অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করবে।
সারসংক্ষেপ টেবিল
| মূলনীতি | সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা | উদাহরণ |
|---|---|---|
| কাজের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ | অনুমান নয়, বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে কাজের পদ্ধতি নির্ধারণ | সময় ও গতি বিশ্লেষণ |
| শ্রমিক নির্বাচন ও প্রশিক্ষণ | যোগ্য শ্রমিক নির্বাচন ও প্রশিক্ষণ প্রদান | দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ |
| সহযোগিতা | শ্রমিক ও ব্যবস্থাপকের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষা | যৌথভাবে সমস্যা সমাধান |
| দায়িত্ব বণ্টন | কাজ ও দায়িত্ব বৈজ্ঞানিকভাবে ভাগ করা | পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন পৃথক |
উপসংহার
সর্বোপরি বলা যায়, টেলরের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার মূলনীতি আধুনিক ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছে। এটি শ্রমিক ও ব্যবস্থাপকের মধ্যে সুষম সম্পর্ক, কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আজও এই মূলনীতিগুলো শিল্প, কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয়।