উপশক্তি স্তর বলেতে কী বোঝায়?

Avatar
calender 06-11-2025

উপশক্তিস্তর বলতে একটি পরমাণুর মূল শক্তিস্তরের ভেতরে ইলেকট্রনদের অবস্থানের সূক্ষ্ম বিভাজন বা ক্ষুদ্র শক্তি পার্থক্যকে বোঝায়। পরমাণুর প্রতিটি শক্তিস্তর বা কক্ষপথে (যেমন K, L, M, N ইত্যাদি) ইলেকট্রনরা অবস্থান করে, কিন্তু একই স্তরের সব ইলেকট্রনের শক্তি সমান নয়। এই শক্তি-ভেদ বা শক্তিস্তরের ভেতরে ক্ষুদ্র বিভাজনকেই বলা হয় উপশক্তিস্তর বা Sub-energy Level। মূলত, ইলেকট্রনের গতি ও কক্ষপথের আকারের পার্থক্যের কারণে এই উপশক্তিস্তর সৃষ্টি হয়। প্রতিটি শক্তিস্তর একাধিক উপশক্তিস্তরে বিভক্ত থাকে, যেমন s, p, d ও f— এগুলোর মধ্যে শক্তি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ, দ্বিতীয় শক্তিস্তরে দুটি উপশক্তিস্তর থাকে— 2s ও 2p; তৃতীয় শক্তিস্তরে তিনটি— 3s, 3p ও 3d। এভাবেই প্রতিটি শক্তিস্তর উপশক্তিস্তরে বিভক্ত হয়ে পরমাণুর গঠনকে জটিল ও বৈচিত্র্যময় করে তোলে।

ইলেকট্রনের তরঙ্গগত আচরণ ও কোয়ান্টাম সংখ্যার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা এই উপশক্তিস্তর নির্ধারণ করেছেন। ইলেকট্রনের চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যা (principal, azimuthal, magnetic ও spin) অনুযায়ী প্রতিটি শক্তিস্তর একাধিক উপশক্তিস্তরে বিভক্ত হয়। প্রথম কোয়ান্টাম সংখ্যা (n) শক্তিস্তর নির্ধারণ করে, আর দ্বিতীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা (l) নির্ধারণ করে উপশক্তিস্তরের ধরন— যেমন l = 0 হলে s, l = 1 হলে p, l = 2 হলে d এবং l = 3 হলে f উপশক্তিস্তর হয়। এই উপশক্তিস্তরগুলোর শক্তি ও ইলেকট্রন ধারণক্ষমতা আলাদা হয়। যেমন s উপশক্তিস্তর সর্বোচ্চ 2টি, p উপশক্তিস্তর 6টি, d উপশক্তিস্তর 10টি এবং f উপশক্তিস্তর 14টি ইলেকট্রন ধারণ করতে পারে।

উপশক্তিস্তর ধারণা মূলত কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আবিষ্কারের ফল, যা পরমাণুর গঠন ব্যাখ্যায় এক যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে। পূর্বে বোয়ারের পরমাণু মডেল অনুযায়ী ইলেকট্রন কেবল নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘোরে বলা হলেও, আধুনিক কোয়ান্টাম মডেলে বলা হয় যে ইলেকট্রন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে অবস্থান করার সম্ভাবনা বেশি থাকে, যাকে অরবিটাল বলে। এই অরবিটালগুলোই আসলে উপশক্তিস্তরের ভৌত রূপ।

নিচে বিভিন্ন শক্তিস্তর ও তাদের উপশক্তিস্তর এবং ইলেকট্রন ধারণক্ষমতা দেখানো হলোঃ

শক্তিস্তর (n) উপশক্তিস্তর সর্বাধিক ইলেকট্রন সংখ্যা
1 (K) 1s 2
2 (L) 2s, 2p 8
3 (M) 3s, 3p, 3d 18
4 (N) 4s, 4p, 4d, 4f 32

এই উপশক্তিস্তরগুলো ইলেকট্রন বিন্যাস নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যেমন সোডিয়াম (Na)-এর ইলেকট্রন বিন্যাস 1s² 2s² 2p⁶ 3s¹। এখানে দেখা যায়, ইলেকট্রনগুলো ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন উপশক্তিস্তরে অবস্থান করছে। ফলে উপশক্তিস্তর ধারণা না থাকলে ইলেকট্রন বিন্যাসের নিয়ম ব্যাখ্যা করা সম্ভব হতো না।

সবশেষে বলা যায়, উপশক্তিস্তর হলো পরমাণুর শক্তিস্তরের ভেতরে থাকা ইলেকট্রনদের শক্তি ও কক্ষপথভেদে সৃষ্ট সূক্ষ্ম বিভাজন। এটি ইলেকট্রনের বিন্যাস, রাসায়নিক বন্ধন গঠন এবং মৌলগুলোর পর্যায়বৃত্ত ধর্ম বুঝতে সহায়তা করে। উপশক্তিস্তরের এই ধারণা আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং পরমাণু কাঠামো সম্পর্কিত সব ধরনের বিশ্লেষণকে বৈজ্ঞানিকভাবে শক্ত ভিত্তি দিয়েছে।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD