ধ্বনি ভাষার মূল ভিত্তি, যার মাধ্যমে মানুষ তার চিন্তা, অনুভূতি ও ধারণা প্রকাশ করতে পারে। সাধারণ অর্থে ধ্বনি বলতে যেকোনো ধরনের শব্দ বা আওয়াজকে বোঝানো হলেও, ব্যাকরণ ও ভাষাতত্ত্বের দৃষ্টিতে এর অর্থ অনেক সীমিত ও নির্দিষ্ট।
ভাষাতাত্ত্বিক অর্থে, ধ্বনি হলো মানুষের বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে উৎপন্ন এমন সব আওয়াজ, যা কথার মাধ্যমে অর্থ প্রকাশে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, এটি কেবলমাত্র মানুষের মুখ, জিহ্বা, গলা, ঠোঁট, তালু ইত্যাদি অঙ্গের সাহায্যে সৃষ্ট শব্দ, যা কোনো না কোনো অর্থবোধক শব্দ তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
মানুষের মুখগহ্বর থেকে উৎপন্ন এই ধ্বনি এককভাবে কোনো অর্থ প্রকাশ না করলেও, ধ্বনিগুলোর সমন্বয়ে গঠিত শব্দ অর্থ প্রকাশ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, “কলম” শব্দটি তিনটি ধ্বনির সমষ্টি — ক, ল, ম।
এই প্রতিটি ধ্বনি নিজে অর্থবোধক নয়, কিন্তু একত্রে তারা একটি নির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশ করে। তাই ভাষা ও শব্দের গঠন বুঝতে ধ্বনির অধ্যয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ধ্বনি মূলত দু’প্রকার — স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি।
-
স্বরধ্বনি (Vowel Sound): যেসব ধ্বনি উচ্চারণ করার সময় বাতাস মুখগহ্বর থেকে বেরিয়ে আসে এবং মুখের ভেতরে কোনো বাধার সৃষ্টি হয় না, সেগুলো স্বরধ্বনি। যেমন— অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, এ, ঐ, ও, ঔ। বাংলা ভাষায় মোট ১১টি স্বরধ্বনি রয়েছে। এই ধ্বনিগুলো স্বতন্ত্রভাবে উচ্চারিত হতে পারে এবং এদের সাহায্যে ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো উচ্চারণযোগ্য হয়।
-
ব্যঞ্জনধ্বনি (Consonant Sound): যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাসের প্রবাহ মুখের কোনো অংশে বাধাপ্রাপ্ত হয়, সেগুলো ব্যঞ্জনধ্বনি। যেমন— ক, খ, গ, চ, জ, ট, ঠ, ত, থ, প, ব ইত্যাদি। বাংলা ভাষায় মোট ৩৯টি ব্যঞ্জনধ্বনি আছে।
স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি মিলেই ভাষার উচ্চারণ, শব্দ, ও বাক্য গঠন সম্পূর্ণ হয়। ধ্বনি ছাড়া ভাষা অস্তিত্ব হারায়, কারণ ধ্বনি না থাকলে মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাই বলা যায়, ধ্বনি হলো ভাষার প্রাণ, যা কথ্য ও লিখিত উভয় রূপের ভিত্তি স্থাপন করে।
ভাষাবিজ্ঞানের প্রাথমিক ও অপরিহার্য অধ্যায় হিসেবে ধ্বনিতত্ত্ব মানুষের বাক্সংক্রান্ত জ্ঞান ও যোগাযোগব্যবস্থাকে গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে।