প্রত্যয় কাকে বলে? কত প্রকার ও কী কী ?
প্রত্যয় হলো ধাতু বা শব্দের পরে যুক্ত হওয়া বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি, যা নতুন শব্দ তৈরি করে এবং শব্দের অর্থ, শ্রেণি ও ব্যবহারের দিক থেকে তা সম্প্রসারিত বা পরিবর্তিত করে। ভাষাতত্ত্বের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যয় বাংলা ভাষার শব্দগঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি মূল শব্দকে নতুন অর্থ বা বৈশিষ্ট্য প্রদান করে, যার ফলে শব্দগঠন বৈচিত্র্যময় হয় এবং ভাষার ব্যবহার শিক্ষণীয় ও সমৃদ্ধ হয়। প্রত্যয় শব্দের মূল অর্থকে পরিবর্তন বা সম্প্রসারণ করে এবং শিক্ষার্থী, লেখক ও ভাষাতত্ত্ববিদদের জন্য ভাষা বিশ্লেষণ, সাহিত্য রচনা এবং দৈনন্দিন কথ্য ব্যবহারে সহায়ক। বাংলা ভাষায় প্রত্যয় প্রধানত দুই প্রকারে বিভক্ত—কৃৎ প্রত্যয় এবং তদ্ধিত প্রত্যয়। কৃৎ প্রত্যয় মূলত ধাতু বা ক্রিয়ামূলের পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি করে, যেমন “চল” + “অন্ত” = “চলন্ত” এবং “ডুব” + “ারি” = “ডুবারি।” অন্যদিকে, তদ্ধিত প্রত্যয় মূলত নাম বা শব্দের পরে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থ, শ্রেণি বা বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করে, যেমন “পঠ” + “অক” = “পাঠক” বা “দিন” + “ইক” = “দৈনিক।” এই দুই প্রকার প্রত্যয় বাংলা ভাষার শব্দগঠনকে সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় করে, যা ভাষার বিশ্লেষণ, সাহিত্য ও কথ্য ব্যবহারে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।
প্রত্যয়ের সংজ্ঞা ও মূল বৈশিষ্ট্য
-
প্রত্যয় হলো ধাতু বা শব্দের পরে যুক্ত হওয়া বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি, যা নতুন শব্দ তৈরি করে।
-
এটি শব্দের অর্থ, শ্রেণি ও ব্যবহার পরিবর্তন বা সম্প্রসারণ করে।
-
উদাহরণ:
-
“নাচ” (ধাতু) + “অন” = “নাচন”
-
“বড়” (শব্দ) + “আই” = “বড়াই”
-
-
প্রত্যয় মূলত শব্দের গঠনকে সমৃদ্ধ করে, যার ফলে শব্দগঠন, বাক্যগঠন এবং ভাষার প্রয়োগ সহজ হয়।
কৃৎ প্রত্যয়
-
সংজ্ঞা: যে প্রত্যয় ধাতু বা ক্রিয়ামূলের পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি করে, তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলা হয়।
-
এটি মূলত ক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তি, অবস্থা বা গুণ নির্দেশ করে।
-
উদাহরণ:
-
“চল” + “অন্ত” = “চলন্ত”
-
“ডুব” + “ারি” = “ডুবারি”
-
“গীত” + “কার” = “গীতিকার”
-
তদ্ধিত প্রত্যয়
-
সংজ্ঞা: যে প্রত্যয় নাম শব্দ বা শব্দের পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ বা শ্রেণি তৈরি করে, তাকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলা হয়।
-
এটি মূল শব্দকে নতুন অর্থ, শ্রেণি বা বৈশিষ্ট্য প্রদান করে।
-
উদাহরণ:
-
“পঠ” + “অক” = “পাঠক”
-
“দিন” + “ইক” = “দৈনিক”
-
“দেশ” + “ীয়” = “দেশীয়”
-
“সুন্দর” + “তা” = “সুন্দরতা”
-
টেবিল: কৃৎ ও তদ্ধিত প্রত্যয় এবং উদাহরণ
| প্রত্যয় প্রকার | সংজ্ঞা | উদাহরণ |
|---|---|---|
| কৃৎ প্রত্যয় | ধাতু বা ক্রিয়ামূলের পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি করে | চলন্ত, ডুবারি, গীতিকার |
| তদ্ধিত প্রত্যয় | নাম বা শব্দের পরে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থ বা শ্রেণি নির্দেশ করে | পাঠক, দৈনিক, দেশীয়, সুন্দরতা |
মূল পয়েন্ট:
-
প্রত্যয় মূল শব্দের অর্থ সম্প্রসারণ বা পরিবর্তন ঘটায়।
-
কৃৎ প্রত্যয় ধাতু বা ক্রিয়ামূলের পরে যুক্ত হয় এবং কর্ম, অবস্থা বা ব্যক্তিকে নির্দেশ করে।
-
তদ্ধিত প্রত্যয় নাম বা শব্দের পরে যুক্ত হয় এবং নতুন অর্থ, গুণ বা শ্রেণি নির্দেশ করে।
-
কৃৎ ও তদ্ধিত প্রত্যয় বাংলা ভাষার শব্দগঠনকে বৈচিত্র্যময় করে এবং বাক্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
-
শিক্ষার্থী ও সাহিত্যিকদের জন্য প্রত্যয় বোঝা ভাষার ব্যবহার ও বিশ্লেষণ সহজতর করে।
সংক্ষেপে বলা যায়, প্রত্যয় হলো ধাতু বা শব্দের পরে যুক্ত হওয়া বর্ণ, যা নতুন শব্দ তৈরি করে। প্রধানত দুটি প্রকার: কৃৎ প্রত্যয় এবং তদ্ধিত প্রত্যয়। কৃৎ প্রত্যয় ধাতু বা ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ বা অর্থ নির্দেশ করে, আর তদ্ধিত প্রত্যয় শব্দ বা নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থ, বৈশিষ্ট্য বা শ্রেণি নির্দেশ করে। এই দুটি প্রত্যয় বাংলা ভাষার শব্দগঠনকে সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় করে, যা শিক্ষার, সাহিত্য রচনা এবং দৈনন্দিন কথ্য ব্যবহারে অপরিহার্য।