হরমোন কাকে বলে? কত প্রকার ও কী কী? কোথায় উৎপন্ন হয় এবং তাদের কাজসমূহ কী কী?

Avatar
calender 06-11-2025

হরমোন হলো এক ধরনের রাসায়নিক বার্তাবাহক (chemical messenger) যা জীবদেহের নির্দিষ্ট অঙ্গ বা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়ে রক্তের মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশে পৌঁছে নানা শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলো শরীরের বৃদ্ধি, বিপাকক্রিয়া, প্রজনন, আবেগ ও ভারসাম্য রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। সংক্ষেপে বলা যায়, হরমোন দেহের রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পরিচালনা করে, ঠিক যেমন স্নায়ুতন্ত্র বৈদ্যুতিক নিয়ন্ত্রণ করে।

হরমোন সাধারণত অন্তঃস্রাবী গ্রন্থি (Endocrine glands) থেকে নিঃসৃত হয়, যেগুলো সরাসরি রক্তে হরমোন ছেড়ে দেয়; কোনো নালী (duct) ব্যবহার করে না। এজন্য এই গ্রন্থিগুলোকে নালীবিহীন গ্রন্থি (ductless glands) বলা হয়।

নিচে হরমোনের প্রকার, উৎপত্তিস্থল ও কাজগুলো বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হলো—

উৎপাদনকারী গ্রন্থি হরমোনের নাম মূল কাজ ও কার্যকারিতা
পিটুইটারি গ্রন্থি (Pituitary gland) গ্রোথ হরমোন (Growth Hormone), প্রোল্যাক্টিন, TSH, ACTH ইত্যাদি দেহের বৃদ্ধি ও বিকাশ নিয়ন্ত্রণ, থাইরয়েড ও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির কাজ সক্রিয় করে, দুধ নিঃসরণে সাহায্য করে।
থাইরয়েড গ্রন্থি (Thyroid gland) থাইরক্সিন (Thyroxine) দেহের বিপাকক্রিয়া ও শক্তি উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে; বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি (Parathyroid gland) প্যারাথরমোন (Parathormone) রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
অগ্ন্যাশয় (Pancreas) ইনসুলিন ও গ্লুকাগন ইনসুলিন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়, গ্লুকাগন তা বাড়ায়—দুইয়ে মিলিয়ে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে।
অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি (Adrenal gland) অ্যাড্রিনালিন ও কর্টিসল বিপদের সময় শরীরকে সতর্ক করে (fight or flight response), রক্তচাপ ও বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।
গনাড (Gonads) – টেস্টিস ও ওভারি টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন যৌন বৈশিষ্ট্য গঠন ও প্রজনন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
পাইনিয়াল গ্রন্থি (Pineal gland) মেলাটোনিন ঘুম-জাগরণের ছন্দ ও দেহঘড়ি নিয়ন্ত্রণ করে।
হাইপোথ্যালামাস (Hypothalamus) রিলিজিং হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থিকে নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণে নির্দেশ দেয়।
থাইমাস গ্রন্থি (Thymus gland) থাইমোসিন শিশুকালে ইমিউন সিস্টেম (রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা) গঠনে ভূমিকা রাখে।

হরমোনগুলোকে রাসায়নিক গঠন অনুযায়ীও তিনভাবে ভাগ করা যায়—
 প্রোটিন বা পেপটাইডজাত হরমোন (যেমন ইনসুলিন, গ্রোথ হরমোন),
 স্টেরয়েড হরমোন (যেমন টেস্টোস্টেরন, কর্টিসল),
 অ্যামাইনজাত হরমোন (যেমন অ্যাড্রিনালিন, থাইরক্সিন)।

হরমোনের ঘাটতি বা অতিরিক্ত নিঃসরণ উভয়ই দেহে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। যেমন—
থাইরক্সিনের অভাবে গয়টার বা ঘাঁটি রোগ হয়, ইনসুলিনের অভাবে ডায়াবেটিস, আর গ্রোথ হরমোনের অতিরিক্ততায় জায়গান্টিজম দেখা দেয়।

সর্বোপরি, বলা যায় যে হরমোন দেহের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়, বৃদ্ধি, শক্তি উৎপাদন, মানসিক ভারসাম্য ও প্রজনন নিয়ন্ত্রণের মূল উপাদান। এগুলোর সঠিক নিঃসরণ ও কার্যকারিতা ছাড়া জীবদেহের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সচল থাকতে পারে না।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD