সংখ্যা পদ্ধতি কত প্রকার হয়ে থাকে এবং সেগুলো কী কী?
সংখ্যা পদ্ধতি হলো এমন একটি গাণিতিক পদ্ধতি যার মাধ্যমে সংখ্যা প্রকাশ ও গণনা করা হয়। এটি মূলত কোনো নির্দিষ্ট ভিত্তি বা “base”-এর ওপর নির্ভর করে গঠিত হয়। সহজভাবে বলতে গেলে, সংখ্যা পদ্ধতি হলো সংখ্যা প্রকাশের এক প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম বা ভাষা, যার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সংখ্যাকে বোঝাতে, লিখতে ও গণনা করতে পারি। সংখ্যা পদ্ধতি মূলত চার প্রকারের হয়ে থাকে — দশমিক, বাইনারি, অক্টাল এবং হেক্সাডেসিমাল। প্রতিটি পদ্ধতির নিজস্ব ভিত্তি, প্রতীক ও প্রয়োগক্ষেত্র রয়েছে যা গণিত, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি হচ্ছে সবচেয়ে প্রচলিত ও প্রাচীন পদ্ধতি, যার ভিত্তি ১০। অর্থাৎ এতে ০ থেকে ৯ পর্যন্ত মোট ১০টি অঙ্ক ব্যবহৃত হয়। এটি দৈনন্দিন জীবনের সকল গাণিতিক কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়। বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি ২, অর্থাৎ এতে কেবলমাত্র দুটি সংখ্যা ০ ও ১ ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটার বা ডিজিটাল সিস্টেমে এই পদ্ধতিই মূল ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় কারণ কম্পিউটার কেবল দুটি অবস্থা—চালু (১) ও বন্ধ (০)—বোঝে। অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি ৮ এবং এতে ০ থেকে ৭ পর্যন্ত অঙ্ক ব্যবহৃত হয়। এটি অনেক সময় বাইনারি সংখ্যা সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়। অপরদিকে, হেক্সাডেসিমাল সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি ১৬ এবং এতে ০ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা ও A থেকে F পর্যন্ত ছয়টি বর্ণ ব্যবহৃত হয়, যেখানে A=10, B=11, C=12, D=13, E=14 এবং F=15 বোঝায়। এটি মূলত কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও মেমোরি ঠিকানায় ব্যবহৃত হয়।
সংক্ষেপে নিচে চারটি সংখ্যা পদ্ধতির তুলনামূলক তথ্য দেওয়া হলো —
| সংখ্যা পদ্ধতির নাম | ভিত্তি (Base) | ব্যবহৃত অঙ্ক | প্রধান ব্যবহার ক্ষেত্র |
|---|---|---|---|
| দশমিক (Decimal) | ১০ | ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ | সাধারণ গাণিতিক কাজ ও দৈনন্দিন ব্যবহার |
| বাইনারি (Binary) | ২ | ০, ১ | কম্পিউটার ও ডিজিটাল সিস্টেম |
| অক্টাল (Octal) | ৮ | ০–৭ | বাইনারি সংখ্যাকে সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ |
| হেক্সাডেসিমাল (Hexadecimal) | ১৬ | ০–৯, A–F | প্রোগ্রামিং, মেমোরি ঠিকানা ও কোডিং |
সবশেষে বলা যায়, সংখ্যা পদ্ধতি মানব সভ্যতার গণনাভিত্তিক অগ্রগতির মূলভিত্তি। দৈনন্দিন জীবনের সহজ গণনা থেকে শুরু করে কম্পিউটারের জটিল প্রোগ্রাম পর্যন্ত, সবকিছুই কোনো না কোনো সংখ্যা পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাই সংখ্যা পদ্ধতি কেবল গণিতের বিষয় নয়, এটি আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানেরও অবিচ্ছেদ্য অংশ।