সাওম কাকে বলে?

Avatar
calender 05-11-2025

সাওম বা রোযা হলো ইসলামের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শরীয়তের একটি বিশেষ রীতি, যা মুসলমানদের জন্য রমযান মাসে পালন করা বাধ্যতামূলক। সাওম আরবি শব্দ, যার ফারসি প্রতিশব্দ 'রোযা'। এই ইবাদতের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য পানাহার এবং ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিরত থাকা। ইসলামের এই শিক্ষা মানব জীবনে আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, এবং আত্মসংযমের প্রশিক্ষণ দেয়।

সাওম বা রোযার মূল উদ্দেশ্য

১. আত্মশুদ্ধি: সাওম পালনকারী ব্যক্তি নিজেকে পাপ এবং খারাপ অভ্যাস থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। এটি আত্মবিশ্লেষণ এবং শুদ্ধির একটি মাধ্যম।

  1. আল্লাহর সন্তুষ্টি: রমযান মাসে সাওম পালন করা মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে। আল্লাহর আদেশ মেনে এই ইবাদত পালন করা, মুসলমানদের আধ্যাত্মিক জীবনে উন্নতি এনে দেয়।

  2. ধৈর্য ও সহনশীলতা: সাওম মানব মনকে ধৈর্যশীল ও সহনশীল করে তোলে। যখন একজন মুসলমান ক্ষুধা এবং তৃষ্ণা সহ্য করতে পারেন, তখন তার হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। এটি এক ধরনের আত্মসংযমের প্রশিক্ষণ।

  3. বুদ্ধি ও অন্তর্জ্ঞানের বিকাশ: সাওম পালন করলে একজন মুসলমানের অন্তর্দৃষ্টি এবং বুদ্ধি খোলামেলা হয়। এটি তার জীবনকে আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত করার জন্য সহায়তা করে।

  4. সমাজের প্রতি সহানুভূতি: রোযা পালনকারী ব্যক্তির ক্ষুধা ও তৃষ্ণা অনুভব করলে, তিনি গরীব ও অসহায়দের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন। এটি সমাজে সমবেদনা এবং দানে উৎসাহিত করে।

সাওমের শর্তাবলী

১. রমযান মাসে পালন: সাওম শুধুমাত্র রমযান মাসে ফরজ। এটি সারা বছর ধরে পালন করা যায় না, তবে রমযান মাসের প্রতিটি দিনের সাওম অবশ্য পালনীয়।

  1. প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে: সাওম পালন করতে হলে ব্যক্তির বয়স ১৫ বছর বা তার অধিক হতে হবে। শিশু এবং মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য সাওম ফরজ নয়।

  2. নিয়মিত পানাহার থেকে বিরত থাকা: সাওমের সময় সুবহে সাদিক (সকাল) থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও শারীরিক চাহিদা থেকে বিরত থাকতে হয়। এর মধ্যে খাবার, পানি, এবং অন্যান্য শারীরিক তৃপ্তির ব্যাপারে সাওম পালনকারীকে সঠিকভাবে বিরত থাকতে হয়।

  3. অপয়া বা অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকা: সাওম পালনকারীকে শুধু খাবার থেকে নয়, বরং খারাপ কাজ, মিথ্যাচার, গালিগালাজ এবং অশ্লীলতা থেকেও বিরত থাকতে হয়।

সাওমের উপকারিতা

১. আধ্যাত্মিক উন্নতি: সাওম একদিকে যেমন মানবিক গুণাবলী গঠন করে, তেমনি এটি আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনেও সাহায্য করে। ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি তার আনুগত্য এবং বিশ্বাসকে আরও মজবুত করতে পারেন।

  1. শারীরিক উপকারিতা: অনেক গবেষণা অনুসারে, রোযা শরীরের জন্যও উপকারী হতে পারে। এটি হজমের প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, শরীরের অপ্রয়োজনীয় টক্সিন বের করে এবং মনোবল বাড়ায়।

  2. সমাজে ঐক্য: রমযান মাসের রোযার মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে ঐক্য এবং সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। সবাই একসঙ্গে সাওম পালন করে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।

সাওমের গুরুত্ব

  • ফরজ ইবাদত: রোযা ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে একটি, তাই এটি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • সামাজিক সংহতি: রোযা সমাজে একতার সুর সৃষ্টি করে এবং আত্মবিশ্বাসী করতে সহায়তা করে।

  • রহমত ও বরকত: সাওমের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও বরকত পেতে সাহায্য পাওয়া যায়, যা জীবনে শান্তি এবং সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।

মোটকথা, সাওম ইসলামী জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি কেবলমাত্র শরীরের শুদ্ধি নয়, বরং একজন মুসলমানের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উন্নতির মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD