মূলধন কাকে বলে?
                        অর্থনীতির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা উৎপাদনের মূল উপাদানগুলোর একটি। সহজভাবে বলতে গেলে, মূলধন হলো এমন একটি সম্পদ যা মানুষ সরাসরি ভোগের জন্য ব্যবহার না করে ভবিষ্যতে আরও বেশি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করে। এটি উৎপাদন প্রক্রিয়াকে গতিশীল করে এবং অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটায়। অর্থাৎ, মানুষ তার শ্রম দিয়ে যে সম্পদ তৈরি করে, তার একটি অংশ যখন পুনরায় উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করে, তখন সেটিই মূলধন হিসেবে গণ্য হয়।
নিচে মূলধন সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হলো—
- 
মূল ধারণা: মূলধন হলো উৎপাদনের এমন একটি উপাদান যা অন্য পণ্য বা সেবা উৎপাদনে সাহায্য করে। এটি মানুষ, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের মালিকানায় থাকতে পারে।
 - 
সংজ্ঞা: মানুষের শ্রমের দ্বারা উৎপাদিত সম্পদের যে অংশ সরাসরি ভোগের জন্য ব্যবহার না করে পুনরায় অধিকতর উৎপাদনের কাজে লাগে, তাকে মূলধন বলে।
 - 
উদাহরণ: যেমন – কারখানার যন্ত্রপাতি, ট্রাক, নৌকা, কম্পিউটার, ভবন, কাঁচামাল ইত্যাদি। এসব জিনিস সরাসরি ভোগের জন্য নয়, বরং এগুলো ব্যবহার করে অন্য পণ্য উৎপাদন করা হয়।
 - 
মূলধনের প্রকৃতি:
- 
এটি মানবসৃষ্ট সম্পদ।
 - 
এটি অভৌত বা ভৌত উভয় রূপেই থাকতে পারে।
 - 
এটি উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।
 - 
এটি সময় ও শ্রম সাশ্রয় করে।
 
 - 
 - 
মূলধনের প্রকারভেদ:
- 
ভৌত মূলধন (Physical Capital): যন্ত্র, ভবন, যানবাহন, সরঞ্জাম ইত্যাদি।
 - 
অর্থমূলধন (Financial Capital): নগদ অর্থ, ব্যাংক জমা, শেয়ার ইত্যাদি যা দিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
 - 
মানব মূলধন (Human Capital): মানুষের শিক্ষা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা যা উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
 - 
সামাজিক মূলধন (Social Capital): সামাজিক সম্পর্ক, আস্থা ও সহযোগিতা যা উৎপাদনের পরিবেশকে উন্নত করে।
 
 - 
 - 
মূলধনের গুরুত্ব:
- 
এটি উৎপাদন প্রক্রিয়ার গতি বাড়ায়।
 - 
শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নয়নে সহায়তা করে।
 - 
নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।
 - 
জাতীয় আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
 - 
প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।
 
 - 
 - 
মূলধন ও উৎপাদন সম্পর্ক: শ্রম, ভূমি ও উদ্যোক্তা — এই তিন উপাদানের সঙ্গে মূলধনের সম্পর্ক সরাসরি। শ্রম ও ভূমি থাকলেও যদি মূলধন না থাকে, তবে উৎপাদন সম্ভব নয়। যেমন, কৃষিতে জমি ও শ্রম আছে, কিন্তু যন্ত্রপাতি (মূলধন) না থাকলে উৎপাদন সীমিত হবে।
 - 
মূলধন সঞ্চয়: অর্থনীতিতে মূলধনের বৃদ্ধির জন্য সঞ্চয় অপরিহার্য। মানুষ যত বেশি সঞ্চয় করবে, তত বেশি মূলধন বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে। ফলে উৎপাদন ও আয়ের বৃদ্ধি ঘটবে।
 - 
মূলধন বিনিয়োগ: সংগৃহীত মূলধনকে নতুন প্রকল্প, শিল্প, অবকাঠামো বা প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করা হয়। এই বিনিয়োগই অর্থনীতিকে সচল রাখে।
 - 
অর্থনীতিতে প্রভাব: মূলধনের বৃদ্ধি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়তা করে। অন্যদিকে মূলধনের অভাব উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করে।
 
সবশেষে বলা যায়, মূলধন অর্থনীতির প্রাণশক্তি। এটি শুধুমাত্র উৎপাদনের একটি উপাদান নয়, বরং উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান চালিকা শক্তি। সঠিক ব্যবহারে মূলধন একটি দেশের অর্থনীতিকে ঊর্ধ্বগতি দিতে পারে, আর অপচয় হলে তা স্থবিরতা সৃষ্টি করে। তাই ব্যক্তিগত ও জাতীয় উভয় পর্যায়ে মূলধনের সঠিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।