জাতীয় পতাকা। (অনুচ্ছেদ লেখ)
                        জাতীয় পতাকা
জাতীয় পতাকা একটি দেশের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও সার্বভৌমত্বের গর্বিত প্রতীক। এটি শুধু একটি কাপড়ের টুকরো নয়, বরং একটি জাতির আত্মত্যাগ, ঐক্য ও গৌরবের পরিচায়ক। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেরই রয়েছে নিজস্ব নকশা, রং এবং অর্থবোধসম্পন্ন পতাকা, যা সেই জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমের অমর স্মারক হিসেবে আজও জাতির অন্তরে গেঁথে আছে।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে দেওয়া হলো:
- 
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আকৃতি আয়তাকার, যার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০:৬। পতাকাটি সাধারণত এক খণ্ড কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়।
 - 
পতাকা টাঙানোর জন্য যে দণ্ড ব্যবহার করা হয়, সেটিকে পতাকা-দণ্ড বা পতাকা-সহ বলা হয়। সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত এবং অন্যান্য জাতীয় স্থাপনায় নিয়মিতভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
 - 
জাতীয় দিবসগুলোতে, যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস বা ভাষা শহীদ দিবসে, দেশের সর্বত্র পতাকা উত্তোলন করা হয়। এতে দেশের নাগরিকদের মধ্যে দেশপ্রেম ও জাতীয় চেতনা আরও দৃঢ় হয়।
 - 
জাতীয় শোক দিবসে, অর্থাৎ ১৫ আগস্টে, পতাকা অর্ধনমিত অবস্থায় উত্তোলন করা হয়। এটি জাতির শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশের প্রতীক। অর্ধনমিত করার নিয়ম হলো পতাকা-দণ্ডের শীর্ষ থেকে পতাকার প্রস্থের সমান অংশ নিচে নামিয়ে টাঙানো।
 - 
পতাকার সবুজ অংশটি প্রকৃতি, তরুণ্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক, যা বাংলাদেশের সবুজ শ্যামল ভূমির চিত্র তুলে ধরে।
 - 
পতাকার লাল বৃত্তটি সূর্যোদয়ের প্রতীক, যা রক্তের মতো উজ্জ্বল লাল রঙে ফুটিয়ে তোলে আমাদের স্বাধীনতার জন্য শহীদদের আত্মত্যাগের স্মৃতি। এটি সূর্যের মতো উদীয়মান বাংলাদেশকেও নির্দেশ করে।
 - 
বাংলাদেশের পতাকার পাঁচটি নির্দিষ্ট পরিমাপ রয়েছে — ১০ ফুট × ৬ ফুট, ৫ ফুট × ৩ ফুট, ২.৫ ফুট × ১.৫ ফুট, ১৫ ইঞ্চি × ৯ ইঞ্চি, এবং ১০ ইঞ্চি × ৬ ইঞ্চি। এগুলো সরকারি নিয়মে নির্ধারিত।
 - 
পতাকার রঙের মান ও অবস্থান নির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত — সবুজ অংশের মাঝ বরাবর সামান্য বাম দিকে লাল বৃত্ত স্থাপিত থাকে। এই অবস্থানই পতাকাকে ভারসাম্যপূর্ণ ও সুন্দর করে তোলে।
 - 
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, “প্রজাতন্ত্রের জাতীয় পতাকা হইতেছে সবুজ ক্ষেত্রের উপর স্থাপিত রক্তবর্ণের একটি ভরাট বৃত্ত” — এই বর্ণনাই পতাকার মূল রূপকে সংজ্ঞায়িত করে।
 - 
আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা গর্বভরে এই পতাকা ধারণ করেন। এটি বৈশ্বিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পরিচয় বহন করে।
 - 
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় পতাকা উত্তোলন করে দেশের প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসা প্রকাশ করে।
 - 
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা যখন দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, তখন এই পতাকার প্রতিটি রং তাদের স্মৃতিকে চিরকাল জীবিত রাখে।
 
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, আমাদের আত্মমর্যাদার চিহ্ন। এটি আমাদের শেখায় ঐক্য, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের মূল্য। তাই প্রত্যেক নাগরিকের উচিত জাতীয় পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা এবং এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। পতাকার দিকে তাকালেই যেন মনে পড়ে, এই পতাকায় রয়েছে লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা এক অমর ইতিহাস — এক স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত প্রতিচ্ছবি।