ব্যাকটেরিয়া কতপ্রকার কী কী?
ব্যাকটেরিয়া প্রধানত চার প্রকারের হয়—কক্কাস (Coccus), ব্যাসিলাস (Bacillus), স্পিরিলাম (Spirillum) এবং ভিব্রিও (Vibrio)। এদের শ্রেণিবিন্যাস করা হয় আকার, গঠন, চলন, রঙ গ্রহণক্ষমতা এবং জীবিত পরিবেশ অনুযায়ী। প্রতিটি প্রকারের ব্যাকটেরিয়া আলাদা বৈশিষ্ট্য ও কাজ সম্পন্ন করে, যা জীববিজ্ঞানে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিন্যাস ও বৈশিষ্ট্য
আকার অনুযায়ী ব্যাকটেরিয়ার প্রকারভেদ
| ব্যাকটেরিয়ার নাম | আকার বা গঠন | উদাহরণ | বৈশিষ্ট্য |
|---|---|---|---|
| কক্কাস (Coccus) | গোল বা বৃত্তাকার | Streptococcus, Staphylococcus | একক বা গুচ্ছ আকারে থাকে; নিউমোনিয়া ও পুঁজ জাতীয় সংক্রমণ ঘটায়। |
| ব্যাসিলাস (Bacillus) | দণ্ডাকার বা লম্বা | Bacillus anthracis, E. coli | অধিকাংশই চলনশীল; অন্ত্র ও মাটিতে বসবাস করে; কিছু রোগজীবাণু। |
| স্পিরিলাম (Spirillum) | সর্পিল বা পেঁচানো | Spirillum volutans | ঘূর্ণনাকারে চলাচল করে; দেহে বা জলে পাওয়া যায়। |
| ভিব্রিও (Vibrio) | কমা আকৃতি বা বাঁকানো | Vibrio cholerae | কলেরার জীবাণু; পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। |
জীবনধারার ভিত্তিতে ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিন্যাস
ব্যাকটেরিয়াকে তাদের খাদ্য গ্রহণ ও বেঁচে থাকার পদ্ধতির ভিত্তিতেও ভাগ করা যায়—
-
স্বপোষী ব্যাকটেরিয়া (Autotrophic bacteria): নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করে। যেমন: Chromatium, Nitrosomonas।
-
পরপোষী ব্যাকটেরিয়া (Heterotrophic bacteria): অন্য জীব বা মৃত পদার্থ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। এরা আবার দুই ভাগে বিভক্ত—
-
পরজীবী ব্যাকটেরিয়া (Parasitic): জীবন্ত প্রাণীর দেহে বাস করে ও রোগ সৃষ্টি করে।
-
অপচয়কারী ব্যাকটেরিয়া (Saprophytic): মৃত জীবদেহে বাস করে ও পচন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
-
অক্সিজেন নির্ভরতার ভিত্তিতে শ্রেণিবিন্যাস
-
বায়ুবীয় ব্যাকটেরিয়া (Aerobic): অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। যেমন Bacillus subtilis।
-
অবায়ুবীয় ব্যাকটেরিয়া (Anaerobic): অক্সিজেন ছাড়া বাঁচে। যেমন Clostridium botulinum।
রঙ গ্রহণক্ষমতার ভিত্তিতে (Gram Staining)
-
Gram-positive bacteria: বেগুনি রঙ ধারণ করে; পুরু কোষপ্রাচীর বিশিষ্ট। যেমন Staphylococcus aureus।
-
Gram-negative bacteria: লালচে রঙ ধারণ করে; পাতলা কোষপ্রাচীর বিশিষ্ট। যেমন E. coli।
বৈজ্ঞানিক ও জীববৈজ্ঞানিক গুরুত্ব
-
ব্যাকটেরিয়া প্রকৃতিতে জৈব পদার্থ পচিয়ে পুষ্টি পুনর্ব্যবহারে সাহায্য করে।
-
খাদ্য প্রস্তুতিতে (yogurt, cheese, vinegar) ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়।
-
কিছু ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন স্থিতি প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে।
-
রোগজীবাণু ব্যাকটেরিয়া মানবদেহে কলেরা, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, ব্যাকটেরিয়া আকার, জীবনধারা ও গঠন অনুযায়ী প্রধানত চার প্রকার—কক্কাস, ব্যাসিলাস, স্পিরিলাম ও ভিব্রিও, তবে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে আরও সূক্ষ্মভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। এরা জীবমণ্ডলে অতি ক্ষুদ্র হলেও পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও জীববিজ্ঞানে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।