রক্ত কয় প্রকার ও কি কি?
রক্ত মূলত চার প্রকারের হয়—A, B, AB এবং O। এই শ্রেণিবিন্যাস নির্ভর করে রক্তের লোহিত কণিকার উপর উপস্থিত অ্যান্টিজেন (Antigen) ও প্লাজমায় উপস্থিত অ্যান্টিবডি (Antibody)-এর ওপর। এছাড়া প্রতিটি রক্তের ধরন আবার Rh (Rhesus) ফ্যাক্টর অনুযায়ী দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—ধনাত্মক (+) ও ঋণাত্মক (−)। অর্থাৎ মোট রক্তের ধরন হয় আটটি: A+, A−, B+, B−, AB+, AB−, O+, এবং O−।
রক্তের প্রকারভেদ সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা
রক্তের গ্রুপ নির্ধারণের ভিত্তি
রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ করা হয় লোহিত রক্তকণিকার পৃষ্ঠে থাকা বিশেষ প্রোটিনজাত উপাদান অ্যান্টিজেন এবং রক্তরসে থাকা অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দ্বারা।
-
Antigen A ও Antigen B—এই দুই উপাদানই নির্ধারণ করে কোন গ্রুপে রক্ত পড়বে।
-
Antibody a ও Antibody b প্লাজমায় থাকে এবং বিপরীত অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
রক্তের প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য
| রক্তের ধরন | লোহিত কণিকায় অ্যান্টিজেন | প্লাজমায় অ্যান্টিবডি | Rh ফ্যাক্টর অনুযায়ী ধরন |
|---|---|---|---|
| A গ্রুপ | Antigen A | Antibody b | A+ বা A− |
| B গ্রুপ | Antigen B | Antibody a | B+ বা B− |
| AB গ্রুপ | Antigen A ও B উভয়ই | কোনো অ্যান্টিবডি নেই | AB+ বা AB− |
| O গ্রুপ | কোনো অ্যান্টিজেন নেই | Antibody a ও b উভয়ই | O+ বা O− |
বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব
-
AB গ্রুপ: “Universal Recipient” বা সর্বগ্রাহী, কারণ তারা যেকোনো গ্রুপের রক্ত গ্রহণ করতে পারে (বিশেষত AB+)।
-
O গ্রুপ: “Universal Donor” বা সর্বদাতা, কারণ তারা যেকোনো গ্রুপে রক্ত দিতে পারে (বিশেষত O−)।
-
Rh ফ্যাক্টর: এটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন, যা উপস্থিত থাকলে রক্ত ধনাত্মক (+) হয়, আর অনুপস্থিত থাকলে ঋণাত্মক (−) হয়। উদাহরণ: O+, A− ইত্যাদি।
রক্তের গ্রুপের চিকিৎসা ও সামাজিক গুরুত্ব
-
রক্তদান ও রক্তগ্রহণের ক্ষেত্রে রক্তের সঠিক গ্রুপ জানা জীবনরক্ষাকারী। ভুল রক্ত দিলে “Agglutination Reaction” হয়ে রক্ত জমাট বাঁধে ও মৃত্যু ঘটতে পারে।
-
গর্ভাবস্থায় Rh ফ্যাক্টর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মা Rh− এবং সন্তান Rh+ হলে Rh incompatibility সমস্যা তৈরি হতে পারে।
-
প্রতিটি মানুষের জন্মের পর থেকেই রক্তের গ্রুপ অপরিবর্তনীয় থাকে, তাই এটি পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবেও বিবেচিত।
সারসংক্ষেপে, রক্তের প্রকারভেদ হলো—A, B, AB ও O; প্রতিটি আবার Rh ফ্যাক্টর অনুযায়ী দুটি ভাগে বিভক্ত। ফলে মোট আট প্রকার রক্ত পাওয়া যায়। এই শ্রেণিবিন্যাস মানবদেহে রক্ত সঞ্চালন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।