কপিরাইট এবং পেটেন্টের মধ্যে পার্থক্য কী?
কপিরাইট এবং পেটেন্ট—দুটিই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের (Intellectual Property) আইনি সুরক্ষা প্রদান করে, তবে এদের উদ্দেশ্য, সুরক্ষার বিষয়বস্তু ও মেয়াদকাল একে অপরের থেকে ভিন্ন। সংক্ষেপে বলতে গেলে, কপিরাইট সৃজনশীল কাজের মালিকানা রক্ষা করে, আর পেটেন্ট আবিষ্কারের অধিকার সুরক্ষিত রাখে।
বিস্তারিত ব্যাখ্যা:
কপিরাইট ও পেটেন্ট উভয়ই এমন আইনি অধিকার, যা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সৃষ্ট কাজের অননুমোদিত ব্যবহার রোধ করে। কিন্তু কপিরাইট মূলত সাহিত্য, শিল্প, সংগীত, চলচ্চিত্র, সফটওয়্যার ইত্যাদি সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত, অন্যদিকে পেটেন্ট প্রযোজ্য প্রযুক্তি, যন্ত্র, প্রক্রিয়া বা নতুন উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে।
কপিরাইটের সংজ্ঞা ও উদ্দেশ্য:
কপিরাইট হলো এমন একটি আইনি অধিকার, যা লেখক, শিল্পী বা স্রষ্টাকে তার সৃষ্ট সাহিত্যিক, শিল্পকর্ম, সংগীত বা অন্যান্য মৌলিক কাজের একচ্ছত্র মালিকানা প্রদান করে। এই অধিকার স্রষ্টাকে তার কাজ পুনর্মুদ্রণ, প্রকাশ, বিক্রয় বা পরিবেশনার নিয়ন্ত্রণ দেয়।
উদাহরণ: গল্প, কবিতা, গান, চলচ্চিত্র, সফটওয়্যার, নকশা ইত্যাদি।
পেটেন্টের সংজ্ঞা ও উদ্দেশ্য:
পেটেন্ট হলো এমন একটি আইনি অধিকার, যা কোনো উদ্ভাবককে তার আবিষ্কার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একক ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এটি সাধারণত নতুন প্রযুক্তি, যন্ত্র, প্রক্রিয়া বা বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের জন্য দেওয়া হয়, যাতে অন্য কেউ অনুমতি ছাড়া তা ব্যবহার বা অনুলিপি করতে না পারে।
উদাহরণ: নতুন ওষুধের ফর্মুলা, বৈজ্ঞানিক যন্ত্র, ইঞ্জিন প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ইত্যাদি।
কপিরাইট ও পেটেন্টের মধ্যে মূল পার্থক্য:
| বিষয় | কপিরাইট (Copyright) | পেটেন্ট (Patent) |
|---|---|---|
| অর্থ | সৃজনশীল কাজের মালিকানা রক্ষা করে | উদ্ভাবন বা আবিষ্কারের আইনি অধিকার প্রদান করে |
| বিষয়বস্তু | সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র, সফটওয়্যার ইত্যাদি | নতুন যন্ত্র, প্রক্রিয়া, রাসায়নিক পদার্থ, প্রযুক্তি ইত্যাদি |
| উদ্দেশ্য | সৃজনশীল কাজের পুনরুৎপাদন ও ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ | নতুন আবিষ্কারের বাণিজ্যিক ব্যবহার রক্ষা করা |
| নিবন্ধন প্রয়োজন | অনেক দেশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাপ্ত, নিবন্ধন ঐচ্ছিক | অবশ্যই সরকারি পেটেন্ট অফিসে নিবন্ধন করতে হয় |
| মেয়াদকাল | স্রষ্টার জীবদ্দশা + মৃত্যুর পর ৬০ বছর পর্যন্ত (বাংলাদেশে) | সাধারণত ২০ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে |
| প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ | কপিরাইট অফিস | পেটেন্ট অফিস |
| উদাহরণ | বই, কবিতা, গান, চলচ্চিত্র, সফটওয়্যার | ওষুধ, ইঞ্জিন, ইলেকট্রনিক যন্ত্র, প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া |
প্রয়োগের দৃষ্টান্ত:
-
একজন লেখক তার লেখা বইয়ের জন্য কপিরাইট পান, যাতে অন্য কেউ তার অনুমতি ছাড়া সেই বই প্রকাশ করতে না পারে।
-
একজন বিজ্ঞানী নতুন কোনো যন্ত্র আবিষ্কার করলে তিনি পেটেন্ট নেন, যাতে কেউ তার আবিষ্কার নকল করে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে না পারে।
আইনি গুরুত্ব:
-
কপিরাইট স্রষ্টার মানসিক ও অর্থনৈতিক অধিকার সংরক্ষণ করে।
-
পেটেন্ট উদ্ভাবকের গবেষণার বিনিময়ে বাণিজ্যিক সুরক্ষা দেয় এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে।
উপসংহার:
অতএব, কপিরাইট সৃজনশীল কাজের রক্ষাকবচ, আর পেটেন্ট হলো বৈজ্ঞানিক বা প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সুরক্ষা প্রাচীর। কপিরাইট যেখানে সাহিত্য ও শিল্পচর্চার স্বাধীনতা নিশ্চিত করে, পেটেন্ট সেখানে নতুন চিন্তা, গবেষণা ও প্রযুক্তি বিকাশে সহায়তা করে। দুটি ক্ষেত্রই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অপরিহার্য ভিত্তি।