গাণিতিক গড় হলো এমন একটি মান যা একটি উপাত্তসমষ্টির কেন্দ্রীয় প্রবণতাকে নির্দেশ করে। এটি উপাত্তগুলোর মানের যোগফলকে মোট উপাত্তের সংখ্যায় ভাগ করে পাওয়া যায়। গাণিতিক গড় দ্বারা আমরা উপাত্তসমূহের গড় মান বা কেন্দ্রীয় মান নির্ণয় করতে পারি, যা পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে একটি মৌলিক বিষয়।
• গাণিতিক গড় নির্ণয়ের সাধারণ সূত্র:
এখানে,
x₁, x₂, x₃,..., xₙ হলো উপাত্তসমূহের মান এবং n হলো মোট উপাত্তের সংখ্যা।
অর্থাৎ, সব উপাত্তের মান যোগ করে সেটিকে মোট উপাত্তের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে গাণিতিক গড় পাওয়া যায়।
সিগমা (∑) প্রতীক দ্বারা যোগফল প্রকাশ করা হয়, যেমন—
• উদাহরণ:
যদি ২০ জন শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৪০, ৪১, ৪৫, ১৮, ৪১, ২০, ৪৫, ৪১, ৪৫, ২৫, ২০, ৪০, ১৮, ২০, ৪৫, ৪৭, ৪৮, ৪৮, ৪৯, ১৯ হয়, তবে
অর্থাৎ, শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের গাণিতিক গড় ৩৫.৭৫।
• অবিন্যস্ত উপাত্তের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি:
যখন উপাত্তের সংখ্যা বেশি হয়, তখন প্রত্যেকটির যোগফল নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
এ পদ্ধতিতে প্রথমে একটি অনুমিত গড় (assumed mean) ধরা হয়, এরপর প্রত্যেক উপাত্ত থেকে অনুমিত গড়টি বিয়োগ করা হয়।
প্রাপ্ত ধনাত্মক ও ঋণাত্মক পার্থক্যের যোগফল নির্ণয় করে সঠিক গড় নির্ধারণ করা হয়।
সূত্রটি হলো—
যেখানে,
a = অনুমিত গড়,
d = প্রত্যেক মান থেকে অনুমিত গড়ের পার্থক্য,
n = মোট উপাত্তের সংখ্যা।
• বিন্যস্ত উপাত্তের গাণিতিক গড়ের সূত্র:
যদি উপাত্তগুলো শ্রেণি আকারে দেওয়া থাকে এবং প্রতিটি শ্রেণির গণসংখ্যা ভিন্ন হয়, তবে
এখানে,
xᵢ = শ্রেণির মধ্যমান,
fᵢ = শ্রেণির গণসংখ্যা।
এই সূত্রে প্রতিটি শ্রেণির মধ্যমান ও গণসংখ্যার গুণফল যোগ করে মোট গণসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে গাণিতিক গড় পাওয়া যায়।
• উদাহরণ (শ্রেণিবিন্যস্ত উপাত্ত):
নিচের সারণি অনুযায়ী ১০০ জন শিক্ষার্থীর গণিতের প্রাপ্ত নম্বরের গাণিতিক গড়—
| শ্রেণি ব্যাপ্তি | শ্রেণি মধ্যমান (xᵢ) | গণসংখ্যা (fᵢ) | fᵢxᵢ |
|---|---|---|---|
| ২৫–৩৪ | ২৯.৫ | ৫ | ১৪৭.৫ |
| ৩৫–৪৪ | ৩৯.৫ | ১০ | ৩৯৫.০ |
| ৪৫–৫৪ | ৪৯.৫ | ১৫ | ৭৪২.৫ |
| ৫৫–৬৪ | ৫৯.৫ | ২০ | ১১৯০.০ |
| ৬৫–৭৪ | ৬৯.৫ | ৩০ | ২০৮৫.০ |
| ৭৫–৮৪ | ৭৯.৫ | ১৬ | ১২৭২.০ |
| ৮৫–৯৪ | ৮৯.৫ | ৪ | ৩৫৮.০ |
মোট f = ১০০, ∑fᵢxᵢ = ৬১৯০
তাই,
অর্থাৎ, শ্রেণিবিন্যস্ত উপাত্তের গাণিতিক গড় হলো ৬১.৯।
সারসংক্ষেপে, গাণিতিক গড় উপাত্তসমূহের কেন্দ্রীয় মান নির্দেশ করে এবং এটি বিশ্লেষণ, তুলনা ও সিদ্ধান্তগ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।