ইউনিকোড কী?
ইউনিকোড কী
ইউনিকোড হলো একটি বিশ্বব্যাপী অক্ষর এনকোডিং ব্যবস্থা (Universal Character Encoding System), যার মাধ্যমে বিশ্বের সব ভাষার অক্ষর, সংখ্যা, প্রতীক ও চিহ্ন একক মানে (standard code) প্রকাশ করা যায়। সহজভাবে বললে, ইউনিকোড এমন একটি আন্তর্জাতিক মান, যা প্রতিটি অক্ষরকে একটি নির্দিষ্ট সাংকেতিক সংখ্যা (code point) প্রদান করে, যাতে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটে সব ভাষা একসঙ্গে ব্যবহার করা সম্ভব হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ইংরেজি অক্ষর A-এর জন্য ইউনিকোড মান হলো U+0041, আর বাংলা অক্ষর অ-এর ইউনিকোড মান হলো U+0985। এই মান অনুযায়ী পৃথিবীর সব ভাষার অক্ষর একই মানদণ্ডে উপস্থাপন করা যায়, যার ফলে বহুভাষিক যোগাযোগ সহজ হয়।
ইউনিকোডের উৎপত্তি ও উদ্দেশ্য
ইউনিকোড তৈরি করা হয় ১৯৯১ সালে “Unicode Consortium” নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল—
-
বিশ্বের সব ভাষাকে একই কম্পিউটার কোডে অন্তর্ভুক্ত করা।
-
ভিন্ন ভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম, প্রোগ্রাম ও ওয়েবসাইটে লেখা প্রদর্শনের সামঞ্জস্য নিশ্চিত করা।
-
পুরনো এনকোডিং সিস্টেম যেমন ASCII, ANSI বা ISCII-এর সীমাবদ্ধতা দূর করা।
ইউনিকোডের মূল বৈশিষ্ট্য
-
প্রতিটি অক্ষরের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাসূচক মান (code point) থাকে।
-
এটি ১৬-বিট, ৩২-বিট বা তার বেশি ডেটা ধারণ করতে পারে, যার ফলে লাখ লাখ অক্ষর এনকোড করা সম্ভব।
-
বিশ্বের প্রায় সব ভাষা—বাংলা, ইংরেজি, আরবি, চীনা, জাপানি, হিন্দি—সবই এতে অন্তর্ভুক্ত।
-
এটি একক মান হওয়ায় ইন্টারনেট, মোবাইল, অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যারে একইভাবে কাজ করে।
ইউনিকোডের কাঠামো (Structure)
ইউনিকোডে প্রতিটি অক্ষরের জন্য একটি Code Point নির্ধারিত থাকে, যা সাধারণত এভাবে লেখা হয়—
U+XXXX, যেখানে “XXXX” হলো হেক্সাডেসিম্যাল (Hexadecimal) সংখ্যা।
| ভাষা | অক্ষর | ইউনিকোড মান |
|---|---|---|
| ইংরেজি | A | U+0041 |
| বাংলা | ক | U+0995 |
| আরবি | أ | U+0623 |
| চীনা | 中 | U+4E2D |
ইউনিকোডের প্রকারভেদ
ইউনিকোডে তিনটি প্রধান এনকোডিং ফর্ম ব্যবহৃত হয়—
-
UTF-8 (8-bit Unicode Transformation Format): ইন্টারনেটে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফরম্যাট; এটি ১–৪ বাইটে অক্ষর সংরক্ষণ করে।
-
UTF-16: প্রতিটি অক্ষরকে ২ বা ৪ বাইটে প্রকাশ করে।
-
UTF-32: প্রতিটি অক্ষরের জন্য নির্দিষ্ট ৪ বাইট ব্যবহার করে।
ইউনিকোডের গুরুত্ব ও ব্যবহার
-
এটি বহুভাষিক ওয়েবসাইট, অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপ্লিকেশনে লেখার একক মান নিশ্চিত করে।
-
বাংলা ও অন্যান্য স্থানীয় ভাষাকে ডিজিটাল জগতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে।
-
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডেটাবেস, ইমেইল, ওয়েব পেজ—সব জায়গায় ইউনিকোড অপরিহার্য।
-
ইউনিকোডের কারণে ভিন্ন ভিন্ন দেশের ব্যবহারকারীরা একই নথি একইভাবে পড়তে পারেন।
উপসংহার
সারসংক্ষেপে বলা যায়, ইউনিকোড হলো একটি আন্তর্জাতিক অক্ষর এনকোডিং মান, যা বিশ্বের সব ভাষার অক্ষরকে একটি একীভূত সাংকেতিক রূপে প্রকাশ করে। এটি প্রযুক্তি, ইন্টারনেট ও বিশ্বায়নের যুগে ভাষাগত বৈচিত্র্য রক্ষা করে মানুষে মানুষে যোগাযোগকে আরও সহজ, নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বজনীন করেছে। তাই ইউনিকোড শুধু একটি কোডিং পদ্ধতি নয়—এটি ভাষা ও প্রযুক্তির মধ্যে সেতুবন্ধন।