সমাজকর্মের পদ্ধতি কয় ধরনের?


Avatar
calender 31-10-2025

সমাজকর্মের পদ্ধতি প্রধানত তিন ধরনের, যথা — (১) কেস ওয়ার্ক (Case Work), (২) গ্রুপ ওয়ার্ক (Group Work), এবং (৩) কমিউনিটি অর্গানাইজেশন (Community Organization)
এই তিনটি পদ্ধতিই সমাজকর্মের মৌলিক বা প্রাথমিক পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত। তবে আধুনিক সমাজকর্মে আরও কিছু সহায়ক বা গৌণ পদ্ধতিও (যেমন—সামাজিক গবেষণা, সমাজকল্যাণ প্রশাসন ও সমাজনীতি) ব্যবহৃত হয়, যা মূল পদ্ধতিগুলোকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।

বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও তথ্য উপাত্ত

 কেস ওয়ার্ক (Case Work)
এটি সমাজকর্মের সবচেয়ে প্রাচীন ও ব্যক্তি-ভিত্তিক পদ্ধতি।

  • এখানে সমাজকর্মী একক কোনো ব্যক্তির (বা পরিবারের) সমস্যা নির্ণয় করে, তার সামাজিক, মানসিক, আর্থিক ও পারিবারিক দিক বিশ্লেষণ করে সহায়তা প্রদান করেন।

  • মূল লক্ষ্য হলো ব্যক্তির সামাজিক সমন্বয় (Social Adjustment) সাধন করা।

বৈশিষ্ট্য

  • ব্যক্তিগত সমস্যা নির্ণয় ও সমাধান।

  • সাক্ষাৎকার, পর্যবেক্ষণ, কাউন্সেলিং ইত্যাদি কৌশল ব্যবহার।

  • উদাহরণ: মাদকাসক্ত, দরিদ্র, বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তিকে সহায়তা করা।

 গ্রুপ ওয়ার্ক (Group Work)
এই পদ্ধতিতে সমাজকর্মী একাধিক ব্যক্তিকে নিয়ে একটি গ্রুপ বা দল তৈরি করেন, যারা একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি।

  • গ্রুপের মাধ্যমে সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা, আত্মবিশ্বাস, সামাজিক দক্ষতা ও দায়িত্ববোধ গড়ে তোলা হয়।

  • এটি দলগত উন্নয়ন (Group Development)-এর একটি সামাজিক কৌশল।

বৈশিষ্ট্য

  • সদস্যদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও পারস্পরিক শিক্ষা।

  • দলগত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান।

  • উদাহরণ: যুব উন্নয়ন দল, নারী প্রশিক্ষণ দল, শিক্ষার্থী সংগঠন ইত্যাদি।

 কমিউনিটি অর্গানাইজেশন (Community Organization)
এই পদ্ধতিতে সমাজকর্মী পুরো সমাজ বা কমিউনিটি-কে কেন্দ্র করে কাজ করেন। এর লক্ষ্য হলো সমাজের সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, সামাজিক পরিবর্তন ও সংগঠন সৃষ্টি।

  • এখানে সমাজকর্মী জনগণ, সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে সমস্যা সমাধান করেন।

বৈশিষ্ট্য

  • সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নকে কেন্দ্র করে কাজ।

  • স্থানীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার।

  • নেতৃত্ব বিকাশ ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

  • উদাহরণ: দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প, শিক্ষা বা স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচি।

সহায়ক বা গৌণ পদ্ধতি (Secondary Methods)

সহায়ক পদ্ধতি উদ্দেশ্য
সামাজিক গবেষণা (Social Research) সমাজের সমস্যা ও চাহিদা নির্ণয়।
সমাজকল্যাণ প্রশাসন (Social Welfare Administration) সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা।
সমাজনীতি (Social Policy) সমাজকল্যাণমূলক আইন, নীতি ও কার্যক্রম প্রণয়ন।

সমাজকর্মের পদ্ধতিগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক
এই তিনটি মূল পদ্ধতি একে অপরের পরিপূরক।

  • কেস ওয়ার্ক ব্যক্তি পর্যায়ে কাজ করে।

  • গ্রুপ ওয়ার্ক দলগত পর্যায়ে কাজ করে।

  • কমিউনিটি অর্গানাইজেশন সমাজ পর্যায়ে কাজ করে।
    এগুলো একত্রে সমাজের ব্যক্তি, দল ও সমাজের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করে।

উপসংহার
সুতরাং, সমাজকর্মের মূল পদ্ধতি তিনটি — কেস ওয়ার্ক, গ্রুপ ওয়ার্ক ও কমিউনিটি অর্গানাইজেশন। এগুলো ব্যক্তি থেকে সমাজ পর্যন্ত মানবকল্যাণের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া তৈরি করে। সমাজকর্ম কেবল সমস্যা সমাধান নয়, বরং মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি বৈজ্ঞানিক, সংগঠিত প্রয়াস।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD