'পরশ্রীকাতরতা' বলতে কী বোযায়? এর কোনো সমার্থক শব্দ আছে কি?
‘পরশ্রীকাতরতা’ বলতে বোঝায় অন্যের সুখ, সমৃদ্ধি বা সাফল্যে অসন্তুষ্ট হওয়া, হিংসা অনুভব করা বা ঈর্ষান্বিত হওয়া। সহজভাবে বললে, যখন কেউ অন্যের ভালো অবস্থায় খুশি না হয়ে বরং বিরক্ত বা কষ্ট পায়, তখন সেই মানসিক অবস্থাকেই পরশ্রীকাতরতা বলা হয়। এটি মানুষের এক প্রকার নেতিবাচক মানসিক দুর্বলতা, যা আত্মতৃপ্তি ও সদাচার নষ্ট করে দেয়।
বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও তথ্য উপাত্ত
শব্দের ব্যুৎপত্তি ও অর্থ
-
“পর” মানে — অন্যের।
-
“শ্রী” মানে — সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি বা সুখ।
-
“কাতরতা” মানে — কষ্ট পাওয়া বা ব্যথিত হওয়া।
অতএব, পরশ্রীকাতরতা অর্থ দাঁড়ায় — “অন্যের সৌভাগ্যে কাতরতা বা কষ্ট পাওয়া।”
এই শব্দটি মানসিক অবস্থা বা চরিত্রের একটি দোষকে প্রকাশ করে, যেখানে ব্যক্তি অন্যের উন্নতি সহ্য করতে পারে না এবং নিজের জীবনে শান্তি খুঁজে পায় না।
মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে বিশ্লেষণ
-
এটি মূলত ঈর্ষা (Envy) বা হিংসা (Jealousy)-এর এক সামাজিক রূপ।
-
পরশ্রীকাতর মানুষ অন্যের ভালো দেখে নিজেকে অপ্রাপ্ত বা ব্যর্থ মনে করে।
-
এই মানসিকতা থেকে অনেক সময় বিদ্বেষ, কুৎসা, বা প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্ম হয়।
-
সমাজে পরশ্রীকাতরতা মানবিক সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।
সমার্থক শব্দসমূহ
‘পরশ্রীকাতরতা’-এর কয়েকটি সমার্থক বা কাছাকাছি অর্থের শব্দ হলো—
-
ঈর্ষা
-
হিংসা
-
পরনিন্দা
-
বিদ্বেষ
-
অসন্তোষ
-
পরবিরোধিতা
তবে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সমার্থক শব্দ হলো ঈর্ষা বা হিংসা, যা সরাসরি অন্যের সাফল্যে কষ্ট পাওয়ার মানসিক অবস্থাকে বোঝায়।
বিপরীত শব্দ
পরশ্রীকাতরতার বিপরীত শব্দ হলো পরশ্রীহর্ষা বা সহানুভূতি, যার অর্থ অন্যের সুখে আনন্দ পাওয়া।
উদাহরণ
রহিমের পরশ্রীকাতরতার কারণে সে বন্ধুদের সাফল্যে খুশি হতে পারে না।
পরশ্রীকাতরতা মানুষের মন থেকে উদারতা নষ্ট করে দেয়।
নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ
বাংলা সাহিত্য ও ধর্মীয় নীতিতে পরশ্রীকাতরতা একটি নিন্দিত গুণ। এটি মানুষকে আত্মবিকাশ থেকে দূরে রাখে এবং সমাজে অশান্তির কারণ হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম প্রমুখ সাহিত্যিক তাঁদের রচনায় এই মানসিকতার বিরুদ্ধে সাবধান করেছেন।
উপসংহার
সুতরাং, পরশ্রীকাতরতা হলো এক প্রকার মানসিক হিংসা, যেখানে ব্যক্তি অন্যের উন্নতি বা সুখ সহ্য করতে পারে না এবং নিজের মনকে কষ্ট দেয়। এর সমার্থক শব্দ ঈর্ষা বা হিংসা, যা মানুষের মনকে সংকীর্ণ করে দেয়। মানুষ যদি এই গুণ থেকে মুক্ত হতে পারে, তবে সমাজে পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্য, সহানুভূতি ও আনন্দের পরিবেশ সৃষ্টি সম্ভব।