সমাজকর্মের উৎপত্তি হয়েছিল কোন দেশে?

Avatar
calender 31-10-2025

সমাজকর্মের উৎপত্তি হয়েছিল ইংল্যান্ডে (England)।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের ফলে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, গৃহহীনতা ও সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। এই সামাজিক সংকট মোকাবিলায় মানবসেবা ও দানশীলতার ভিত্তিতে “সমাজকর্ম” নামে একটি নতুন পেশাগত ধারার সূচনা হয়। পরবর্তীতে এটি সংগঠিত পেশা ও শিক্ষার শাখা হিসেবে বিকশিত হয় এবং বিশ্বজুড়ে প্রসার লাভ করে।

বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও তথ্য উপাত্ত

উৎপত্তির পটভূমি
সমাজকর্মের উৎপত্তি ঘটে মানবতার প্রয়োজনে—বিশেষ করে সমাজের দরিদ্র, অসহায় ও বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে।

  • ১৮শ শতাব্দীর শেষ ও ১৯শ শতাব্দীর শুরুতে ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব (Industrial Revolution) ঘটে।

  • এই বিপ্লবে গ্রামের মানুষ শহরমুখী হয়, কিন্তু কর্মসংস্থানের অভাব, দারিদ্র্য, অপরাধ, শিশুশ্রম ও গৃহহীনতা তীব্র আকার নেয়।

  • তখন সমাজের সচেতন ও মানবদরদি মানুষ এগিয়ে আসে অসহায়দের সাহায্যে—এভাবেই সমাজসেবামূলক কার্যক্রমের সূচনা হয়, যা পরবর্তীতে সমাজকর্ম (Social Work) হিসেবে বিকশিত হয়।

প্রাথমিক ধাপ

  • ১৬০১ সালে “Elizabethan Poor Law” প্রণীত হয় ইংল্যান্ডে, যা দরিদ্র ও কর্মহীন জনগণের সহায়তার প্রথম সংগঠিত আইন হিসেবে পরিচিত।

  • ১৯শ শতাব্দীতে “Charity Organization Society (COS)” ও “Settlement House Movement” শুরু হয়, যা সমাজকর্মের কাঠামোগত ভিত্তি তৈরি করে।

  • পরবর্তীতে এই কার্যক্রমগুলোই আধুনিক সমাজকর্মের তাত্ত্বিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়।

বিকাশের ধাপসমূহ

  • ইংল্যান্ড: সমাজসেবার প্রাতিষ্ঠানিক রূপের সূচনা।

  • যুক্তরাষ্ট্র: সমাজকর্মকে পেশাগত শিক্ষা হিসেবে গড়ে তোলা হয়; ১৮৯৮ সালে নিউইয়র্কে প্রথম “School of Social Work” প্রতিষ্ঠিত হয়।

  • বিশ্বব্যাপী বিস্তার: ২০শ শতাব্দীতে সমাজকর্ম আন্তর্জাতিক পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং জাতিসংঘ (UN) ও বিশ্ব সমাজকর্ম সংস্থা (IFSW) এই পেশার মান নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।

সমাজকর্মের মূল উদ্দেশ্য

  • মানুষের সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করা ও সমাধান করা।

  • দারিদ্র্য, বেকারত্ব, মাদকাসক্তি, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান।

  • সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের উন্নয়ন।

  • ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের কল্যাণ নিশ্চিত করা।

উপসংহার
সুতরাং, সমাজকর্মের সূচনা ইংল্যান্ডে, শিল্পবিপ্লব-পরবর্তী সামাজিক সংকট মোকাবিলার প্রেক্ষাপটে। এরপর এটি ধীরে ধীরে ইউরোপ ও আমেরিকা জুড়ে বিস্তার লাভ করে এবং আজ এটি একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পেশা ও একাডেমিক শাস্ত্র, যার মূল উদ্দেশ্য হলো মানবকল্যাণ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD