বক্র গতি কাকে বলে? উদাহরণ।

Avatar
calender 31-10-2025

বক্র গতি হলো এমন এক ধরনের গতি, যেখানে কোনো বস্তুর গতিপথ সরলরেখা নয় বরং বক্ররেখা বা বাঁকা পথে হয়। অর্থাৎ, বস্তু যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলার সময় তার দিক পরিবর্তন করে এবং তার পথ একটি বক্ররেখা তৈরি করে, তখন সেই গতিকে বক্র গতি বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি পাথরকে যখন বক্রভাবে উপরে নিক্ষেপ করা হয়, তখন সেটি যে পথে চলে — সেটিই বক্র গতি।

বক্র গতির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এতে দিক ও বেগ উভয়ই পরিবর্তিত হয়। এটি সরল গতি থেকে আলাদা কারণ সরল গতিতে বস্তু কেবল একটি দিকেই চলে। বক্র গতি প্রকৃতিতে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যেমন—নিক্ষেপ গতি, উপগ্রহের কক্ষপথে ঘূর্ণন, গাড়ির বাঁক নেওয়া ইত্যাদি।

বক্র গতির বিশদ ব্যাখ্যা ও তথ্য উপাত্ত

বক্র গতির সংজ্ঞা অনুযায়ী বৈশিষ্ট্যসমূহ

  • বক্র গতিতে বস্তু একটি বক্ররেখা বা বাঁকা পথে চলে।

  • এ ধরনের গতিতে বস্তুর দিক ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়, যদিও বেগের মান একই থাকতে পারে বা পরিবর্তিতও হতে পারে।

  • এটি ঘটে যখন বস্তুর উপর ক্রমাগত দিক পরিবর্তনকারী বল ক্রিয়া করে (যেমন—কেন্দ্রাভিমুখ বল)।

  • বক্র গতির ফলস্বরূপ বস্তুর অবস্থান ও দিক উভয়ই সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়।

বক্র গতির প্রকারভেদ
বক্র গতিকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়—

প্রকার ব্যাখ্যা উদাহরণ
বৃত্তাকার গতি বস্তু যখন একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রের চারপাশে একই দূরত্ব বজায় রেখে ঘূর্ণন করে, তখন তা বৃত্তাকার গতি। পৃথিবীর উপগ্রহের কক্ষপথে ঘূর্ণন।
নিক্ষেপ গতি যখন কোনো বস্তুকে বায়ুতে বক্ররেখা বরাবর নিক্ষেপ করা হয় এবং মাধ্যাকর্ষণের কারণে তা বক্র পথে পড়ে। বল নিক্ষেপ বা কামানের গোলার পথ।

বক্র গতির উদাহরণসমূহ

  1. কোনো বলকে যদি কোণের মাধ্যমে উপরে নিক্ষেপ করা হয়, সেটি একটি বক্র পথ অতিক্রম করে নিচে পড়ে—এটি বক্র গতি।

  2. পৃথিবীর উপগ্রহ যেমন চাঁদ বা কৃত্রিম স্যাটেলাইট পৃথিবীর চারদিকে যে পথে ঘোরে, সেটি একটি বক্র পথ।

  3. গাড়ি যখন বাঁক নেয়, তখন সেটির পথ সরল না থেকে বাঁকা হয়ে যায়—এটিও বক্র গতি।

  4. কোনো বিমান আকাশে দিক পরিবর্তন করে যখন ওঠানামা করে, তখন সেটির গতি বক্র হয়ে যায়।

বক্র গতির কারণ
বক্র গতি ঘটার প্রধান কারণ হলো বল প্রয়োগের দিক পরিবর্তন। উদাহরণস্বরূপ, কোনো বস্তু বৃত্তাকার পথে চললে কেন্দ্রের দিকে একটি কেন্দ্রাভিমুখ বল (Centripetal Force) কাজ করে, যা তাকে বক্র পথে চালিত রাখে। এই বল না থাকলে বস্তুটি সরল পথে সরে যেত।

গাণিতিক ধারণা (সংক্ষেপে)
বক্র গতির বিশ্লেষণে সময়ের সাথে অবস্থানের পরিবর্তনকে দ্বিমাত্রিক বা ত্রিমাত্রিক সমীকরণে প্রকাশ করা হয়। যেমন, কোনো বস্তুর নিক্ষেপ গতির পথ সাধারণত একটি প্যারাবোলিক (parabolic) বক্ররেখা।

উপসংহার
সবশেষে বলা যায়, বক্র গতি এমন এক ধরনের গতি যেখানে বস্তু কোনো বক্র বা বাঁকা পথে চলে, এবং এর মূল বৈশিষ্ট্য হলো দিকের ক্রমাগত পরিবর্তন। প্রকৃতিতে এই গতি ব্যাপকভাবে দেখা যায়, বিশেষত নিক্ষেপ গতি, বৃত্তাকার গতি, বা গ্রহ-উপগ্রহের গতি প্রভৃতিতে। এটি পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা গতি ও বলের সম্পর্ক বুঝতে সাহায্য করে।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD