গাণিতিক গড় নির্ণয়ের সূত্র
গাণিতিক গড় এমন একটি পরিসংখ্যানিক ধারণা যা উপাত্তসমূহের কেন্দ্রীয় প্রবণতা প্রকাশ করে। এটি বোঝায় একটি সমষ্টির সমস্ত মানকে একটি গড় মান দ্বারা প্রকাশ করা সম্ভব। অর্থাৎ, কোনো উপাত্তসমূহের সংখ্যাসূচক মানের সমষ্টিকে উপাত্তের মোট সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যে মান পাওয়া যায়, সেটিই গাণিতিক গড় বা Arithmetic Mean। এটি তথ্য বিশ্লেষণ, পরিসংখ্যান, অর্থনীতি, শিক্ষা ও গবেষণার নানা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
গাণিতিক গড় নির্ণয়ের সূত্র ও বিশ্লেষণ নিচে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হলো—
• সাধারণ সূত্র (Unclassified Data):
যদি উপাত্তসমূহের সংখ্যা ( n ) এবং তাদের মানগুলো হয় ( x_1, x_2, x_3, …, x_n ), তবে গাণিতিক গড়
[
\bar{x} = \frac{x_1 + x_2 + x_3 + … + x_n}{n}
]
অথবা সংক্ষিপ্ত আকারে,
[
\bar{x} = \frac{1}{n} \sum_{i=1}^{n} x_i
]
এখানে, Σ (সিগমা) একটি গ্রিক অক্ষর যা যোগফল নির্দেশ করে। অর্থাৎ, সব উপাত্তের মান একত্রে যোগ করে মোট সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে গড় পাওয়া যায়।
• উদাহরণ:
একটি শ্রেণিতে ২০ জন শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর—৪০, ৪১, ৪৫, ১৮, ৪১, ২০, ৪৫, ৪১, ৪৫, ২৫, ২০, ৪০, ১৮, ২০, ৪৫, ৪৭, ৪৮, ৪৮, ৪৯, ১৯।
এখানে,
[
n = ২০, \quad \sum x_i = ৭১৫
]
সুতরাং,
[
\bar{x} = \frac{৭১৫}{২০} = ৩৫.৭৫
]
অতএব, গাণিতিক গড় = ৩৫.৭৫
• সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে গাণিতিক গড় নির্ণয় (Assumed Mean Method):
যখন উপাত্তের সংখ্যা বেশি হয়, তখন সরাসরি যোগফল নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্য সংক্ষিপ্ত বা অনুমিত গড় পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এতে একটি সংখ্যা অনুমিত গড় (a) হিসেবে ধরা হয় এবং প্রত্যেক মান থেকে এটি বিয়োগ করা হয়। এই বিয়োগফলগুলো (d) হতে বীজগাণিতিক যোগফল নির্ণয় করে সূত্রে প্রয়োগ করা হয়—
[
\bar{x} = a + \frac{\sum d}{n}
]
এখানে, ( a ) হলো অনুমিত গড় এবং ( d = x_i - a )।
এই পদ্ধতিতে হিসাব সহজ ও দ্রুত হয়, বিশেষ করে বৃহৎ উপাত্তের ক্ষেত্রে।
• বিন্যস্ত উপাত্তের ক্ষেত্রে গাণিতিক গড় (Classified Data):
যদি উপাত্তসমূহ শ্রেণিভিত্তিক বা Frequency Distribution আকারে দেওয়া থাকে, অর্থাৎ প্রতিটি শ্রেণির জন্য গণসংখ্যা থাকে, তবে সূত্রটি হবে—
[
\bar{x} = \frac{\sum f_i x_i}{\sum f_i}
]
এখানে,
-
( x_i ) = প্রতিটি শ্রেণির মধ্যমান (Class Midpoint)
-
( f_i ) = সংশ্লিষ্ট শ্রেণির গণসংখ্যা (Frequency)
-
( \sum f_i x_i ) = সব শ্রেণির “গণসংখ্যা × মধ্যমান”-এর যোগফল
-
( \sum f_i ) = মোট গণসংখ্যা
• উদাহরণ (বিন্যস্ত উপাত্ত):
| শ্রেণি ব্যাপ্তি | শ্রেণি মধ্যমান (xᵢ) | গণসংখ্যা (fᵢ) | fᵢxᵢ |
|---|---|---|---|
| ২৫–৩৪ | ২৯.৫ | ৫ | ১৪৭.৫ |
| ৩৫–৪৪ | ৩৯.৫ | ১০ | ৩৯৫.০ |
| ৪৫–৫৪ | ৪৯.৫ | ১৫ | ৭৪২.৫ |
| ৫৫–৬৪ | ৫৯.৫ | ২০ | ১১৯০.০ |
| ৬৫–৭৪ | ৬৯.৫ | ৩০ | ২০৮৫.০ |
| ৭৫–৮৪ | ৭৯.৫ | ১৬ | ১২৭২.০ |
| ৮৫–৯৪ | ৮৯.৫ | ৪ | ৩৫৮.০ |
| মোট | ১০০ | ৬১৯০.০ |
এখানে,
[
\bar{x} = \frac{\sum f_i x_i}{\sum f_i} = \frac{৬১৯০}{১০০} = ৬১.৯
]
অতএব, গাণিতিক গড় = ৬১.৯
• ব্যবহার ও গুরুত্ব:
-
কোনো উপাত্তের গড় প্রবণতা বা কেন্দ্রীয় মান বুঝতে সাহায্য করে।
-
তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
-
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, শিক্ষা মূল্যায়ন, গবেষণা ও সমাজবিজ্ঞানে গাণিতিক গড় বহুল ব্যবহৃত।
-
এটি সহজে নির্ণয়যোগ্য এবং বৈজ্ঞানিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি।
সারাংশে বলা যায়, গাণিতিক গড় এমন একটি পরিমাপক যা একটি তথ্যসমষ্টির কেন্দ্রীয় প্রবণতা সহজভাবে প্রকাশ করে। এটি গণিতের অন্যতম মৌলিক ও বাস্তবমুখী ধারণা, যা দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ পর্যন্ত সর্বত্র ব্যবহৃত হয়।