'এস.এস.সি ও সমমানের পরীক্ষা' এখানে 'সমমান' মানে কী?
‘এস.এস.সি ও সমমানের পরীক্ষা’—এখানে ‘সমমান’ শব্দের অর্থ হলো ‘সমপর্যায়ের’, ‘সমমূল্যের’ বা ‘সমান মানসম্পন্ন’।
অর্থাৎ, যেসব পরীক্ষা বা শিক্ষাগত মূল্যায়ন এস.এস.সি (Secondary School Certificate) পরীক্ষার সমান মান, মর্যাদা ও শিক্ষাগত স্তর বহন করে, সেগুলোকেই সমমানের পরীক্ষা বলা হয়। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন বোর্ড ও শিক্ষাধারায় নেওয়া কিছু পরীক্ষা সরকারিভাবে এস.এস.সি পরীক্ষার সমতুল্য হিসেবে স্বীকৃত, তাই এগুলোকে একত্রে বোঝাতে “এস.এস.সি ও সমমানের পরীক্ষা” বলা হয়।
‘সমমান’ শব্দের বিশ্লেষণ ও অর্থগত ব্যাখ্যা
-
শব্দের প্রকার: বিশেষণ (Adjective)
-
গঠন: ‘সম’ + ‘মান’ = ‘সমমান’
-
অর্থ: যার মান বা স্তর অপর কিছুর সঙ্গে সমান বা সমপর্যায়ের।
-
ইংরেজি প্রতিশব্দ: Equivalent / Of equal standard
এই শব্দটি ব্যবহৃত হয় তখন, যখন দুটি বিষয় ভিন্ন উৎস বা পদ্ধতির হলেও তাদের শিক্ষাগত বা পেশাগত মান এক বলে স্বীকৃত হয়।
বাংলাদেশে এস.এস.সি ও সমমানের পরীক্ষার ধরন
বাংলাদেশে মাধ্যমিক স্তরে তিনটি প্রধান শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে—সাধারণ শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা। প্রত্যেক ব্যবস্থার চূড়ান্ত পরীক্ষার মান সমান ধরা হয়, কারণ এগুলো মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা সমাপ্তির প্রতীক। নিচের সারণিতে তা স্পষ্ট করা হলো—
| শিক্ষাব্যবস্থা | পরীক্ষার নাম | এস.এস.সি-এর সঙ্গে সম্পর্ক | পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান |
|---|---|---|---|
| সাধারণ শিক্ষা | এস.এস.সি (Secondary School Certificate) | মূল মাধ্যমিক পরীক্ষা | মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড |
| মাদ্রাসা শিক্ষা | দাখিল পরীক্ষা | এস.এস.সি-এর সমমান | বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড |
| কারিগরি শিক্ষা | এস.এস.সি (ভোকেশনাল) | এস.এস.সি-এর সমমান | বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড |
| ওপেন শিক্ষা | এস.এস.সি (ওপেন স্কুল) | এস.এস.সি-এর সমমান | বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটি |
এই চার ধরনের পরীক্ষার শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে একই স্তরের উচ্চমাধ্যমিক (এইচ.এস.সি বা সমমান) শিক্ষায় ভর্তি হতে পারে, যা প্রমাণ করে—এসব পরীক্ষার শিক্ষাগত মান এক বা “সমমান”।
‘সমমান’ ধারণার ব্যবহারিক তাৎপর্য
-
শিক্ষাগত সমতা নিশ্চিতকরণ: ভিন্ন শিক্ষা বোর্ড বা পদ্ধতির শিক্ষার্থীরা যেন একই স্তরের উচ্চশিক্ষায় অংশ নিতে পারে, সেই উদ্দেশ্যেই সমমানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
-
পেশাগত স্বীকৃতি: সরকারি চাকরি বা ভর্তি পরীক্ষায় এস.এস.সি ও সমমানের পরীক্ষার সার্টিফিকেটকে সমানভাবে বিবেচনা করা হয়।
-
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: অনেক বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ও দাখিল বা ভোকেশনাল সার্টিফিকেটকে এস.এস.সি-এর সমমান হিসেবে গ্রহণ করে।
‘সমমান’ শব্দের অন্যান্য উদাহরণ
-
“এই ডিপ্লোমা কোর্সটি ব্যাচেলর ডিগ্রির সমমান।”
-
“এই প্রশিক্ষণ সার্টিফিকেটটি এইচ.এস.সি-এর সমমান হিসেবে গণ্য হয়।”
-
“মাদ্রাসা দাখিল পাস ছাত্রও এস.এস.সি পাস ছাত্রের সমান যোগ্য।”
ব্যাকরণিক ও ভাষাগত বিশ্লেষণ
‘সমমান’ একটি যৌগিক বিশেষণ, যা দুটি শব্দ ‘সম’ ও ‘মান’ থেকে গঠিত।
-
‘সম’ শব্দের অর্থ—একই বা সমান।
-
‘মান’ শব্দের অর্থ—স্তর, গুণ বা মূল্য।
এই দুইটি শব্দ একত্রে ‘সমমান’ গঠন করে, যার অর্থ দাঁড়ায় “একই মানসম্পন্ন” বা “সমপর্যায়ের”।
সমমান স্বীকৃতির প্রভাব
-
এটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ঐক্য ও অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি করেছে।
-
বিভিন্ন পদ্ধতির শিক্ষার্থীরা এখন একই যোগ্যতায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাচ্ছে।
-
কারিগরি ও ধর্মীয় শিক্ষার মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সারসংক্ষেপে বলা যায়,
“সমমান” মানে হলো যে পরীক্ষার বা ডিগ্রির শিক্ষাগত মান, মর্যাদা ও স্তর অপর পরীক্ষার সমান। তাই “এস.এস.সি ও সমমানের পরীক্ষা” বলতে বোঝায়—এস.এস.সি ছাড়াও দাখিল, ভোকেশনাল, ওপেন স্কুল ইত্যাদি পরীক্ষা, যেগুলো সরকার কর্তৃক মাধ্যমিক স্তরের সমপর্যায়ের হিসেবে স্বীকৃত। এর মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থায় সমতা, সুযোগের বিস্তার এবং জাতীয় একক মানদণ্ড বজায় থাকে, যা একটি টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা কাঠামো গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।