উন্নয়ন কাকে বলে?
উন্নয়ন বলতে বোঝায় একটি ধারাবাহিক পরিবর্তন বা অগ্রগতি, যার মাধ্যমে ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। অর্থাৎ, উন্নয়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা মানুষের জীবনমান, আয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও সামগ্রিক কল্যাণ বৃদ্ধি করে। এটি কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, বরং মানুষের চিন্তা, জীবনযাপন ও পরিবেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতিফলন।
উন্নয়নের মূল ধারণা
উন্নয়ন শব্দটি ইংরেজি “Development” থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো ধীরে ধীরে বিকাশ বা অগ্রগতি অর্জন করা। এটি এমন একটি গতিশীল প্রক্রিয়া যা সমাজের প্রতিটি স্তরে পরিবর্তন আনে—অর্থনৈতিক উৎপাদন বৃদ্ধি থেকে শুরু করে শিক্ষার প্রসার, নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ রক্ষা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পর্যন্ত। উন্নয়নের লক্ষ্য হলো মানুষের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করা।
উন্নয়নের প্রধান বৈশিষ্ট্য
-
ধারাবাহিকতা: উন্নয়ন একবারে ঘটে না; এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া।
-
বহুমাত্রিকতা: এটি অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনে।
-
মানুষকেন্দ্রিকতা: উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হলো মানুষ ও তার জীবনমানের উন্নতি।
-
স্থিতিশীলতা: উন্নয়ন এমনভাবে হতে হবে যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সম্পদ ও সুযোগ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
-
সমতা ও ন্যায়বিচার: প্রকৃত উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি তার সুফল ভোগ করতে পারে।
উন্নয়নের বিভিন্ন ধরন
| উন্নয়নের ধরন | সংক্ষিপ্ত বর্ণনা |
|---|---|
| অর্থনৈতিক উন্নয়ন | জাতীয় আয়, কর্মসংস্থান ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতির অগ্রগতি। |
| সামাজিক উন্নয়ন | শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, ও মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজের অগ্রগতি। |
| রাজনৈতিক উন্নয়ন | গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন। |
| সাংস্কৃতিক উন্নয়ন | সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, ঐতিহ্য ও সৃজনশীলতার বিকাশ। |
| টেকসই উন্নয়ন | এমন উন্নয়ন যা বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করে কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতি করে না। |
উন্নয়নের সূচক বা মাপকাঠি
-
মাথাপিছু আয় (Per Capita Income) বৃদ্ধি
-
সাক্ষরতার হার ও শিক্ষার মানোন্নয়ন
-
গড় আয়ু ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি
-
দারিদ্র্য ও বেকারত্বের হার হ্রাস
-
নারীর কর্মসংস্থান ও সমঅধিকার বৃদ্ধি
-
প্রযুক্তি ও অবকাঠামোর অগ্রগতি
-
পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উন্নয়ন
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে ক্রমাগত উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ খাতে দ্রুত পরিবর্তন এসেছে। “ডিজিটাল বাংলাদেশ”, “রূপকল্প ২০৪১” এবং “স্মার্ট বাংলাদেশ” উদ্যোগগুলো দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুততম উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর একটি।
উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ
-
দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও বৈষম্য
-
পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন
-
দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অদক্ষতা
-
শিক্ষা ও প্রযুক্তির সীমিত সুযোগ
সারসংক্ষেপে বলা যায়, উন্নয়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা মানুষের জীবনকে ভালো করে, সমাজকে স্থিতিশীল করে এবং রাষ্ট্রকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। এটি কেবল অর্থনৈতিক উন্নতি নয়, বরং মানুষের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও সামগ্রিক সুখের নিশ্চয়তা প্রদান করে। প্রকৃত উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন প্রতিটি মানুষ তার মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা যায়।