পরিবেশ দূষণের ৫টি কারণ কী?
পরিবেশ দূষণের পাঁচটি প্রধান কারণ হলো—বায়ু দূষণ, জল দূষণ, মাটি দূষণ, শব্দ দূষণ এবং প্লাস্টিক বা বর্জ্য দূষণ। এসব কারণ মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ডের ফল, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে এবং মানুষের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। নিচে প্রতিটি কারণ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।
বায়ু দূষণ
বায়ু দূষণ ঘটে যখন কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ও ধোঁয়ার মতো ক্ষতিকর গ্যাস বাতাসে মিশে যায়। এর প্রধান উৎস হলো কারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের নির্গত ধোঁয়া, কয়লা ও তেল পোড়ানো, এবং বন ধ্বংস। বায়ু দূষণে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হৃদরোগ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
জল দূষণ
নদী, হ্রদ, পুকুর বা ভূগর্ভস্থ পানিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, কীটনাশক বা বর্জ্য মেশার ফলে জল দূষণ হয়। শিল্পকারখানার বর্জ্য, তেল, প্লাস্টিক ও পয়ঃনিষ্কাশনের ময়লা পানির গুণগত মান নষ্ট করে। জল দূষণে জলজ প্রাণী মারা যায় এবং পানিবাহিত রোগ যেমন কলেরা, টাইফয়েড ইত্যাদি ছড়িয়ে পড়ে।
মাটি দূষণ
রাসায়নিক সার, কীটনাশক, প্লাস্টিক ও বর্জ্যের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। শিল্পবর্জ্য ও পলিথিন মাটিতে মিশে গিয়ে উদ্ভিদের শিকড় ও জীবাণুর কার্যক্রমে বাধা দেয়। ফলে কৃষি উৎপাদন কমে যায় এবং খাদ্যশৃঙ্খল বিপর্যস্ত হয়।
শব্দ দূষণ
যানবাহনের হর্ন, নির্মাণকাজ, কারখানার যন্ত্রপাতি, উচ্চ শব্দে গান বা মাইক ব্যবহারের ফলে শব্দ দূষণ ঘটে। অতিরিক্ত শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি নষ্ট করে, মানসিক অশান্তি, নিদ্রাহীনতা ও উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা তৈরি করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মতে, ৭০ ডেসিবেলের ওপরে শব্দ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
প্লাস্টিক ও বর্জ্য দূষণ
প্লাস্টিক, পলিথিন, ইলেকট্রনিক বর্জ্য এবং অনাবশ্যক আবর্জনা যথাযথভাবে নিষ্পত্তি না করলে তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। এসব পদার্থ প্রকৃতিতে সহজে পচে না, ফলে নদী-নালা, মাটি ও সাগর দুষিত হয় এবং প্রাণীকুলের জীবন বিপন্ন হয়।
পরিবেশ দূষণের সারসংক্ষেপ
| দূষণের ধরন | প্রধান উৎস | ফলাফল |
|---|---|---|
| বায়ু দূষণ | যানবাহন, কারখানা, জ্বালানি পোড়ানো | শ্বাসকষ্ট, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন |
| জল দূষণ | শিল্পবর্জ্য, কীটনাশক, প্লাস্টিক | জলজ প্রাণীর মৃত্যু, রোগ বিস্তার |
| মাটি দূষণ | রাসায়নিক সার, বর্জ্য, পলিথিন | মাটির উর্বরতা হ্রাস |
| শব্দ দূষণ | যানবাহন, নির্মাণ, মাইক | শ্রবণশক্তি হ্রাস, মানসিক চাপ |
| প্লাস্টিক দূষণ | প্লাস্টিক ও পলিথিন | পরিবেশ ও প্রাণীকুলের ক্ষতি |
সারাংশে বলা যায়, পরিবেশ দূষণের এসব কারণ নিয়ন্ত্রণে না আনলে প্রকৃতির ভারসাম্য সম্পূর্ণ নষ্ট হবে। তাই দূষণ কমাতে বৃক্ষরোপণ, পুনর্ব্যবহার (recycling), পরিষ্কার জ্বালানি ব্যবহার এবং সচেতন নাগরিক আচরণ অপরিহার্য।