সম্পূরক খাদ্য হলো এমন এক ধরনের অতিরিক্ত আহার যা প্রাণীর স্বাভাবিক খাদ্যের ঘাটতি পূরণ করে এবং তাদের দ্রুত বৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করে। এটি মূলত পশু ও পাখির পুষ্টি ঘাটতি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রাকৃতিক খাদ্যে প্রয়োজনীয় সব উপাদান না থাকলে, বাইরের উৎস থেকে সরবরাহ করা খাদ্যকে সম্পূরক খাদ্য বলা হয়। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
সংজ্ঞা: সম্পূরক খাদ্য বলতে বোঝায়—প্রাণীর যথাযথ বৃদ্ধি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন অর্জনের জন্য প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সরবরাহ করা অতিরিক্ত খাদ্য। যেমন—গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি বা মাছের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক খাদ্যের ঘাটতি পূরণের জন্য আলাদা করে দেওয়া খাদ্যই সম্পূরক খাদ্য।
-
মূল উদ্দেশ্য: প্রাণীর স্বাস্থ্যের উন্নতি ও উৎপাদন বৃদ্ধিই এর প্রধান লক্ষ্য। প্রাকৃতিক খাদ্যে যদি পর্যাপ্ত প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, খনিজ বা ভিটামিন না থাকে, তাহলে সম্পূরক খাদ্য সেই ঘাটতি পূরণ করে।
-
পুষ্টি উপাদান: সাধারণত সম্পূরক খাদ্যে শর্করা, প্রোটিন, চর্বি, খনিজ লবণ, ভিটামিন এবং জলসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকে। এ উপাদানগুলো প্রাণীর হজম, বৃদ্ধি, দুধ উৎপাদন, ডিম উৎপাদন ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
-
উদাহরণ: হাঁস-মুরগির জন্য ভুট্টা, চালের কুঁড়া, খৈল, মাছের গুঁড়া, খনিজ মিশ্রণ ইত্যাদি সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গরু বা ছাগলের ক্ষেত্রে খৈল, ভুষি, খড়, ঘাসের সঙ্গে প্রোটিনসমৃদ্ধ দানা ও লবণ মিশ্রণ দেওয়া হয়। মাছের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় সরিষার খৈল, চালের কুঁড়া, গমের ভূষি ও শুকনো মাছের গুঁড়া।
-
সম্পূরক খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা:
-
প্রাণীর বৃদ্ধি ও দেহগঠন সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে।
-
দুধ, ডিম, মাংস বা উলের উৎপাদন বাড়াতে।
-
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতে।
-
প্রজনন ক্ষমতা ও দুধ উৎপাদন চক্র বজায় রাখতে।
-
অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক পশুপালন নিশ্চিত করতে।
-
-
খাদ্য সরবরাহের পরিমাণ: প্রাণীর বয়স, ওজন, প্রজাতি এবং পরিবেশের ওপর নির্ভর করে সম্পূরক খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। অতিরিক্ত খাদ্য দিলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে, আবার কম দিলে বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
-
সম্পূরক খাদ্যের ধরন:
-
শুষ্ক সম্পূরক খাদ্য: যেমন—ভুষি, খৈল, চালের কুঁড়া।
-
তরল সম্পূরক খাদ্য: যেমন—গুড় মিশ্রিত পানীয়, খনিজ দ্রবণ ইত্যাদি।
-
খনিজ সম্পূরক: ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লোহা, দস্তা প্রভৃতি খনিজ লবণ মিশ্রণ।
-
-
ভালো সম্পূরক খাদ্যের বৈশিষ্ট্য:
-
সহজলভ্য ও স্বল্পমূল্যের হওয়া উচিত।
-
হজমযোগ্য ও নিরাপদ হতে হবে।
-
প্রাণীর বয়স অনুযায়ী উপযুক্ত অনুপাতে পুষ্টি থাকতে হবে।
-
কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক বা দূষিত উপাদান থাকা যাবে না।
-
-
অর্থনৈতিক দিক: সম্পূরক খাদ্য ব্যবহারের ফলে প্রাণীর উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা পশুপালক বা কৃষকের আর্থিক লাভ বাড়ায়। যেমন—দুধ বা ডিম উৎপাদন বাড়লে বাজারমূল্যও বাড়ে, ফলে খামার টেকসই হয়।
সবশেষে বলা যায়, সম্পূরক খাদ্য প্রাণীর পুষ্টি ও উৎপাদনের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। এটি প্রাকৃতিক খাদ্যের ঘাটতি পূরণ করে প্রাণীর স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং কৃষি ও পশুপালন খাতে অর্থনৈতিক সাফল্য নিশ্চিত করে।