শুল্ক বলতে কী বোঝায়?
 
                        শুল্ক বলতে বোঝায় সরকার কর্তৃক আরোপিত এক ধরনের কর, যা আমদানি ও রপ্তানি করা পণ্যের ওপর ধার্য করা হয়। এটি একটি আর্থিক নীতি বা রাজস্ব উৎস, যার মাধ্যমে সরকার দেশের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং রাজস্ব বৃদ্ধি করে। শুল্ক সাধারণত সীমান্তে বা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আদায় করা হয়, এবং এটি দেশের অর্থনৈতিক নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
শুল্ক মূলত দুই প্রকার—আমদানি শুল্ক ও রপ্তানি শুল্ক। আমদানি শুল্ক বিদেশ থেকে দেশে আনা পণ্যের ওপর ধার্য হয়, আর রপ্তানি শুল্ক দেশের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে পাঠানোর সময় নেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ শুল্ক, যেমন প্রতিশোধমূলক শুল্ক (countervailing duty) বা অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কও আরোপ করা হয়, যা নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক।
শুল্কের প্রধান উদ্দেশ্য ও ভূমিকা
- 
রাজস্ব আহরণ: রাষ্ট্রের প্রধান আয়ের উৎসগুলোর একটি হলো শুল্ক। এটি সরকারি ব্যয় নির্বাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 
- 
দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা: বিদেশি পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে দেশীয় শিল্পকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সাহায্য করা হয়। 
- 
বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ: আমদানি ও রপ্তানি নীতিকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সরকার অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা করে। 
- 
বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ: প্রয়োজনীয় নয় এমন বিদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় রোধ করা হয়। 
- 
সামাজিক ও পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ: ক্ষতিকর বা অপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে তার ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়। 
শুল্কের প্রকারভেদ
| প্রকার | বর্ণনা | 
|---|---|
| আমদানি শুল্ক (Import Duty) | বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ধার্য কর। | 
| রপ্তানি শুল্ক (Export Duty) | দেশের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানির সময় আরোপিত কর। | 
| অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক (Anti-Dumping Duty) | বিদেশি পণ্য অতি কম দামে বিক্রি হলে দেশীয় বাজার সুরক্ষায় আরোপিত শুল্ক। | 
| প্রতিশোধমূলক শুল্ক (Countervailing Duty) | অন্য দেশ কোনো ভর্তুকি দিলে তার প্রতিক্রিয়ায় আরোপিত শুল্ক। | 
| সংরক্ষণমূলক শুল্ক (Protective Duty) | নতুন বা দুর্বল শিল্পকে সুরক্ষা দিতে আরোপিত শুল্ক। | 
বাংলাদেশে শুল্ক ব্যবস্থার ভূমিকা
বাংলাদেশে শুল্ক আদায় ও প্রশাসনের দায়িত্বে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR)। শুল্ক আদায় মূলত কাস্টমস হাউস ও বিমানবন্দর কাস্টমসের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শুল্ক থেকে রাজস্ব আহরণ দেশের মোট আয়ের একটি বড় অংশ। বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO)-এর নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশও শুল্কহার কমিয়ে আনার দিকে এগোচ্ছে, যাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আরও সহজ হয়।
সারাংশে বলা যায়, শুল্ক হলো এমন এক আর্থিক উপায় যার মাধ্যমে সরকার শুধু রাজস্ব সংগ্রহই করে না, বরং অর্থনৈতিক স্থিতি, শিল্প উন্নয়ন এবং বাণিজ্য ভারসাম্যও রক্ষা করে। এটি একটি দেশের আর্থিক নীতির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে, যার প্রভাব জাতীয় অর্থনীতির প্রায় সব খাতে প্রতিফলিত হয়।