চিকেন নেক বলতে কি বোঝায়? বাংলাদেশ এবং ভারতের চিকেন নেক কোনটি?

Avatar
calender 30-10-2025

সঠিক উত্তর:
“চিকেন নেক” বা “চিকেন’স নেক” বলতে ভূ-রাজনৈতিক পরিভাষায় এমন এক সংকীর্ণ ভূখণ্ডকে বোঝায় যেটি একটি দেশের মূল ভূখণ্ডকে অন্য অংশের সঙ্গে যুক্ত রাখে এবং যেখানে যদি যোগাযোগ বা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ঐ অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। এই ধারণাটি ভারতের সিলিগুড়ি করিডোর (Siliguri Corridor) ও বাংলাদেশের দু-টি সংকীর্ণ রুট-খণ্ডের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও তথ্য উপাত্ত

শব্দের উৎপত্তি ও ব্যবহার

  • “চিকেন নেক” (Chicken’s Neck) ভৌগোলিক বা কৌশলগত ওই অঞ্চলের আকৃতির জন্য যেমন “কয়েকটি মুখ দিয়ে সংকীর্ণ ঘাড়ের মতো অংশ” হিসেবে উদাহরণ দেওয়া হয়, তেমনি এক রূপক অর্থেও — যেখানে পুরো সিস্টেমের সংযোগ এমন এক জায়গায় সীমাবদ্ধ, যে স্থান কেটে ফেলা একাধিক উপায় বা সরব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইংরেজি উইকিপিডিয়া “Chicken’s neck” নিবন্ধে দেখায় যে এটি সাধারণ অর্থে মুরগির ঘাড়কে নির্দেশ করলেও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই শব্দটি “সিলিগুড়ি করিডোর”-এর মতো সংকীর্ণ ভূখণ্ড বোঝাতে ব্যবহার হয়েছে। (Wikipedia)

ভারতের “চিকেন নেক” – সিলিগুড়ি করিডোর

  • পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত এই করিডোর ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর‐পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে যুক্ত রাখে। 

  • এখানে সর্বনিম্ন প্রস্থ মাত্র প্রায় ২০–২২ কিলোমিটার। 

  • এই খণ্ড অংশের কারণে একদিকে এটি ভারতীয় সংহতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ রূপে কাজ করে, অন্যদিকে এটি এক বিশাল নাজুকতা – কারণ যদি এখানকার যোগাযোগ সাময়িকও ব্যাহত হয়, তাহলে উত্তর‐পূর্ব অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

  • সংবাদসংস্থাগুলোর মতে, এই অঞ্চলে শুধুই হাড়ি রাস্তাঘাট বা রেললাইন নয়, সামরিক ও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রয়েছে, তাই এটি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জ। 

বাংলাদেশে “চিকেন নেক” সংশ্লিষ্ট সংকীর্ণ ভূখণ্ড

  • সম্প্রতি বাংলাদেশের ভূখণ্ডেও দুইটি সংকীর্ণ ভূখণ্ডকে “চিকেন নেক” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে — প্রথমটি উত্তর বাংলাদেশে, দাকসিন দিনাজপুর জেলার পাশ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয়ের মধ্যবর্তী করিডোর। 

  • দ্বিতীয়টি চট্টগ্রাম বিভাগের দিকে, দক্ষিণ ত্রিপুরার - মিরসরাই অঞ্চলের ঘেঁষা সংযোগ হিসেবে। 

  • এই দুই করিডোরের সংকীর্ণতা ও ভূ-সামরিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের জন্যও একরকম দুর্বলতা তৈরি করেছে, বিশেষ করে যখন ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে neighbouring দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও আঞ্চলিক ভূ-নীতির প্রসঙ্গ আসে। 

দুটি দেশের “চিকেন নেক”-এর তুলনা

দেশ করিডোর / অংশ সংকীর্ণতা অথবা প্রস্থ ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব
ভারত সিলিগুড়ি করিডোর প্রায় ২০-২২ কিমি সর্বনিম্ন প্রস্থ উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের একমাত্র যোগাযোগ পথ।
বাংলাদেশ উত্তর করিডোর (দক্ষিণ দিনাজপুর–মেঘালয়) ও চট্টগ্রাম করিডোর একটির প্রস্থ প্রায় ২৮-৮০ কিমি উল্লেখ করা হয়েছে।  দেশের অভ্যন্তর সংযোগ ও বন্দরে যোগাযোগের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে।

প্রাসঙ্গিক বিষয়সমূহ

  • “চিকেন নেক” বোঝার ক্ষেত্রে শুধুই ভূ-আকৃতি নয়, ভৌগোলিক অবস্থান, যোগাযোগ সড়ক-রেল, সামরিক বাহিনী সরবরাহ, neighbour দেশ-সীমান্ত পরিস্থিতি এগুলো মিলিয়ে দেখা হয়।

  • যেমন ভারতের ক্ষেত্রে, সিলিগুড়ি করিডোর ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশের উভয় পাশে অবস্থান এবং চিন ও তিব্বতের সঙ্গেও অন্ত্যমিল রয়েছে — এ কারণে এটি কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত নাজুক।

  • বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জানালা-রূপে রপ্তানি-আমদানি, বন্দর সংযোগ, অভ্যন্তর ভূগোল এমন কিছু বিষয় এই করিডোরগুলিকে সংবেদনশীল করে তোলে।

উপসংহার
“চিকেন নেক” একটি ভূ-রাজনৈতিক পরিভাষা যা একটি দেশের সংযোগকারী সংকীর্ণ ভূখণ্ডকে নির্দেশ করে। ভারতের একমাত্র “চিকেন নেক” হলো সিলিগুড়ি করিডোর যা উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে মূল ভূখণ্ডকে যুক্ত রাখে। বাংলাদেশেও দুইটি অংশ—উত্তর করিডোর ও চট্টগ্রাম করিডোর—এই ধরনের সংকীর্ণ ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তথ্য-উপাত্ত প্রমাণ করে, শুধু আকৃতি নয়, যোগাযোগ ও নিরাপত্তার দিক থেকেও এসব করিডোর দেশের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং একরকম দুর্বলতা সৃষ্টি করে।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD