তাপ শক্তি কাকে বলে?
 
                        তাপ শক্তি হলো এমন এক ধরনের শক্তি, যা কোনো পদার্থের অণু বা পরমাণুর গতির ফলে উৎপন্ন হয় এবং পদার্থের তাপমাত্রা নির্ধারণ করে। সহজভাবে বলতে গেলে, কোনো পদার্থের কণাগুলোর মধ্যে যত বেশি গতিশক্তি থাকে, তার তাপ শক্তি তত বেশি হয়। এটি এক পদার্থ থেকে অন্য পদার্থে প্রবাহিত হলে আমরা তাকে “তাপ” বলি, আর পদার্থের ভেতরে থাকা মোট অভ্যন্তরীণ শক্তিকে বলা হয় তাপ শক্তি।
তাপ শক্তির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য
- 
তাপ শক্তি হলো গতিশক্তির এক রূপ। পদার্থের অণু যত দ্রুত গতি করে, তত বেশি তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়। 
- 
এটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হতে পারে—যেমন পরিবহন (conduction), সংবহন (convection), ও বিকিরণ (radiation) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। 
- 
তাপ শক্তির একক হলো জুল (Joule) বা ক্যালরি (calorie)। 
- 
এটি সর্বদা উচ্চ তাপমাত্রা থেকে নিম্ন তাপমাত্রার দিকে প্রবাহিত হয়। 
তাপ শক্তির উৎস
তাপ শক্তির উৎস অনেক রকম হতে পারে, যেমন—
- 
সূর্য (প্রধান প্রাকৃতিক উৎস) 
- 
দহন প্রক্রিয়া (কাঠ, কয়লা, তেল বা গ্যাস পুড়লে) 
- 
রাসায়নিক বিক্রিয়া (যেমন, এসিড-বেস বিক্রিয়া) 
- 
বিদ্যুৎ শক্তি থেকে উৎপন্ন তাপ (হিটার, রেজিস্ট্যান্স) 
- 
পারমাণবিক বিক্রিয়া (যেমন, সূর্যের তাপ) 
তাপ শক্তির উদাহরণ
- 
চুলায় পানি গরম করা হলে পানি তাপ শক্তি পেয়ে ফুটতে শুরু করে। 
- 
সূর্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উষ্ণ করে—এটিও তাপ শক্তির প্রভাব। 
- 
বিদ্যুতের বাল্ব বা আয়রন মেশিন গরম হয়ে ওঠে, কারণ বিদ্যুৎ শক্তি তাপে রূপান্তরিত হয়। 
তাপ শক্তির প্রভাব
তাপ শক্তি কোনো পদার্থের ওপর বিভিন্ন প্রভাব ফেলে—
- 
পদার্থের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। 
- 
পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি পায় (তাপ সম্প্রসারণ)। 
- 
কোনো পদার্থ কঠিন থেকে তরল বা তরল থেকে গ্যাসে রূপান্তরিত হতে পারে (অবস্থা পরিবর্তন)। 
- 
রাসায়নিক বিক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পায়। 
তাপ শক্তির গুরুত্ব
তাপ শক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবন ও শিল্পক্ষেত্রে অপরিহার্য—
- 
রান্না, পানি গরম করা, গরম কাপড় শুকানো ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। 
- 
শিল্পকারখানায় লোহা গলানো, বাষ্প ইঞ্জিন বা বিদ্যুৎ উৎপাদনে তাপ শক্তি ব্যবহৃত হয়। 
- 
প্রাকৃতিকভাবে এটি পৃথিবীর আবহাওয়া ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। 
উপসংহার
অতএব, তাপ শক্তি হলো পদার্থের কণাগুলোর গতির ফলে উৎপন্ন অভ্যন্তরীণ শক্তি, যা এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে স্থানান্তরিত হয়ে তাপমাত্রা পরিবর্তন ঘটায়। এটি শুধু পদার্থের তাপমাত্রাই নির্ধারণ করে না, বরং পৃথিবীর জীবনধারণ, জলবায়ু ও শিল্প উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবেও কাজ করে। তাই তাপ শক্তিকে যথার্থভাবে বলা হয় — “প্রকৃতির প্রাণশক্তি”।