বায়ু কাকে বলে?
 
                        বায়ু হলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বিদ্যমান বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ, যা মূলত অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, আর্গন, জলের বাষ্প ও অল্প পরিমাণ অন্যান্য গ্যাস নিয়ে গঠিত। সাধারণভাবে বলা যায়, বায়ু হলো পৃথিবীকে ঘিরে থাকা গ্যাসীয় স্তর যা প্রাণীকুলের শ্বাস-প্রশ্বাস, দহন প্রক্রিয়া ও জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
বায়ুর প্রধান উপাদানসমূহ
বায়ু কোনো একক গ্যাস নয়; এটি বহু গ্যাসের সংমিশ্রণ। নিচের টেবিলটি বায়ুর মূল উপাদান ও তাদের আনুমানিক শতকরা অংশ দেখায়—
| উপাদান | রাসায়নিক সংকেত | শতকরা ভাগ (%) | 
|---|---|---|
| নাইট্রোজেন | N₂ | ৭৮.০৮ | 
| অক্সিজেন | O₂ | ২০.৯৫ | 
| আর্গন | Ar | ০.৯৩ | 
| কার্বন ডাই-অক্সাইড | CO₂ | ০.০৩৬ | 
| হিলিয়াম, নিয়ন, হাইড্রোজেন, ওজোন ইত্যাদি | — | অতি সামান্য পরিমাণ | 
| জলীয় বাষ্প | H₂O | পরিবর্তনশীল (০–৪%) | 
বায়ুর বৈশিষ্ট্য
- 
বায়ু স্বচ্ছ, বর্ণহীন, গন্ধহীন ও স্বাদহীন। 
- 
এটি স্থিতিস্থাপক এবং সংকুচিত বা সম্প্রসারিত হতে পারে। 
- 
বায়ু পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের কারণে বায়ুমণ্ডলে অবস্থান করে এবং ক্রমে ঘনত্ব কমে যায়। 
- 
এর ঘনত্ব ও তাপমাত্রা উচ্চতা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। 
বায়ুর গুরুত্ব
বায়ু জীবজগৎ ও পৃথিবীর পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- 
শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়তা: প্রাণী অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে; উদ্ভিদ বিপরীত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। 
- 
দহন প্রক্রিয়া: অক্সিজেন ছাড়া কোনো দহন সম্ভব নয়। 
- 
জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ: বায়ু তাপ ও আর্দ্রতা পরিবহণ করে আবহাওয়া ও জলবায়ুর ভারসাম্য বজায় রাখে। 
- 
শব্দ পরিবহণ: শব্দ তরঙ্গ বায়ুর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে আমরা শুনতে পাই। 
- 
উড়োজাহাজ ও পাখির উড্ডয়ন: বায়ুর ঘনত্ব ও চাপের পার্থক্যের কারণে উড্ডয়ন সম্ভব হয়। 
বায়ুর স্তর বা মণ্ডল
বায়ুমণ্ডলকে সাধারণত কয়েকটি স্তরে ভাগ করা হয়—
- 
ক্ষোভাবলয় (Troposphere): পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটবর্তী স্তর; এখানে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে। 
- 
সমতাপবলয় (Stratosphere): এখানে ওজোন স্তর অবস্থিত, যা সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। 
- 
মধ্যবলয়, তাপবলয় ও বহিঃবলয়—এগুলোতে ধীরে ধীরে ঘনত্ব কমে যায় এবং বায়ু প্রায় শূন্য হয়ে যায়। 
উপসংহার
সুতরাং, বায়ু হলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের একটি গ্যাসীয় মিশ্রণ, যা প্রাণধারণ, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি না থাকলে পৃথিবীতে জীবন সম্ভব হতো না। তাই বায়ুকে প্রকৃত অর্থে “জীবনের জন্য অপরিহার্য গ্যাসীয় আবরণ” বলা হয়।