তড়িৎ প্রাবল্য কী?
 
                        তড়িৎ প্রাবল্য বা Electric Intensity (Electric Field Intensity) হলো কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে একক ধনাত্মক আধানের উপর ক্রিয়াশীল তড়িৎ বলের পরিমাণ। সহজভাবে বলা যায়, তড়িৎ প্রাবল্য এমন একটি ভৌত রাশি যা নির্দেশ করে, কোনো আধানযুক্ত বস্তু তার আশেপাশের স্থানে কতটা শক্তিশালী তড়িৎ ক্ষেত্র সৃষ্টি করছে। অর্থাৎ, এটি তড়িৎ ক্ষেত্রের ক্ষমতা বা প্রভাবের একটি পরিমাপ।
সংজ্ঞা
কোনো স্থানে যদি একক ধনাত্মক আধান রাখা হলে তার উপর যে তড়িৎ বল ক্রিয়া করে, সেই বলের মানই ঐ স্থানের তড়িৎ প্রাবল্য।
গাণিতিক প্রকাশ:
ধরা যাক, কোনো বিন্দুতে একক ধনাত্মক আধান (q = 1 C) এর উপর ক্রিয়াশীল তড়িৎ বলের মান F।
তাহলে তড়িৎ প্রাবল্য,
E = F/q
এখানে,
E = তড়িৎ প্রাবল্য (N/C বা V/m)
F = তড়িৎ বল (Newton)
q = আধানের মান (Coulomb)
তড়িৎ প্রাবল্যের একক ও মাত্রা
- 
SI একক: নিউটন প্রতি কুলম্ব (N/C) বা ভোল্ট প্রতি মিটার (V/m) 
- 
মাত্রা: [M¹L¹T⁻³I⁻¹] 
তড়িৎ প্রাবল্যের দিক
তড়িৎ প্রাবল্যের দিক হলো ঐ স্থানে একক ধনাত্মক আধানের উপর ক্রিয়াশীল তড়িৎ বলের দিক।
- 
ধনাত্মক আধানের ক্ষেত্রে প্রাবল্যের দিক বাহিরের দিকে। 
- 
ঋণাত্মক আধানের ক্ষেত্রে প্রাবল্যের দিক ভেতরের দিকে। 
বিন্দু আধানের তড়িৎ প্রাবল্যের সূত্র:
কোনো বিন্দু আধান q থেকে r দূরত্বে তড়িৎ প্রাবল্যের মান হবে—
E = (1 / 4πε₀) × (q / r²)
এখানে,
ε₀ = মুক্ত স্থানের তড়িৎ ধ্রুবক = 8.854 × 10⁻¹² C²/N·m²
তড়িৎ প্রাবল্যের কারণ ও বৈশিষ্ট্য
- 
এটি একটি ভেক্টর রাশি, কারণ এর মান ও দিক উভয়ই থাকে। 
- 
এটি আধানের পরিমাণের সাথে সরাসরি এবং দূরত্বের বর্গের বিপরীত অনুপাতে পরিবর্তিত হয়। 
- 
একই স্থানে একাধিক আধান থাকলে মোট তড়িৎ প্রাবল্য হয় প্রতিটি আধানের প্রাবল্যের ভেক্টর যোগফল। 
- 
তড়িৎ প্রাবল্যই তড়িৎ ক্ষেত্রের শক্তি নির্দেশ করে। 
উদাহরণ:
ধরা যাক, একটি ধনাত্মক আধান q = 2 × 10⁻⁶ C কোনো বিন্দুতে রাখা আছে। তার থেকে 3 মিটার দূরে একটি বিন্দুতে তড়িৎ প্রাবল্যের মান হবে—
E = (9 × 10⁹ × 2 × 10⁻⁶) / (3)²
= (18 × 10³) / 9 = 2 × 10³ N/C
তড়িৎ প্রাবল্যের গুরুত্ব
- 
তড়িৎ ক্ষেত্রের মান নির্ধারণে এটি মূল রাশি। 
- 
ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক সার্কিট ও তড়িৎ প্রকৌশলে এটি মৌলিক ভূমিকা পালন করে। 
- 
কোনো আধান, পরিবাহক বা ইনসুলেটরের চারপাশের তড়িৎ ক্ষেত্র বিশ্লেষণে এটি অপরিহার্য। 
উপসংহার
তড়িৎ প্রাবল্য হলো তড়িৎ ক্ষেত্রের তীব্রতার মাপক। এটি জানায়, কোনো আধান তার চারপাশের স্থানে কত শক্তিতে তড়িৎ প্রভাব সৃষ্টি করছে। পদার্থবিজ্ঞানে এটি তড়িৎ বল, ক্ষেত্র, বিভব ও বিভব পার্থক্যের মতো মৌলিক ধারণাগুলোর ভিত্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।