সন্নিবেশ বন্ধন কী? কিভাবে গঠিত হয়? যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যাসহ কর?
 
                        সন্নিবেশ বন্ধন বা কোভ্যালেন্ট বন্ধন (Covalent bond) হলো এমন এক ধরনের রাসায়নিক বন্ধন যেখানে দুটি পরমাণু তাদের বহিঃস্ত ইলেকট্রন স্তর পূর্ণ করার জন্য এক বা একাধিক ইলেকট্রন যুগল ভাগাভাগি করে নেয়। এটি সাধারণত অধাতব পরমাণুর মধ্যে ঘটে। এই বন্ধনের মাধ্যমে প্রত্যেক পরমাণু স্থিতিশীল নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো ইলেকট্রনিক বিন্যাস অর্জন করে। সন্নিবেশ বন্ধনের ধারণাটি প্রথম প্রস্তাব করেন মার্কিন রসায়নবিদ গিলবার্ট এন. লুইস (G.N. Lewis) ১৯১৬ সালে।
গঠনের মূলনীতি
যখন দুটি অধাতব পরমাণু স্থিতিশীল হতে চায় কিন্তু ইলেকট্রন প্রদান বা গ্রহণ সম্ভব নয়, তখন তারা ইলেকট্রনের যুগল ভাগাভাগি করে। এই ভাগাভাগির ফলে উভয় পরমাণুর অক্টেট (বা হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে ডুয়েট) পূর্ণ হয় এবং তারা স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছে যায়।
উদাহরণসহ বিশ্লেষণ
হাইড্রোজেন অণু (H₂):
প্রতিটি হাইড্রোজেন পরমাণুর একটি করে ইলেকট্রন থাকে। দুটি পরমাণু তাদের ইলেকট্রন ভাগাভাগি করে নেয়, ফলে এক যুগল ইলেকট্রন উভয়ের চারপাশে ঘোরে এবং একটি একক সন্নিবেশ বন্ধন গঠিত হয়।
চিহ্নে প্রকাশ: H : H বা H–H
অক্সিজেন অণু (O₂):
প্রতিটি অক্সিজেন পরমাণুর ছয়টি করে বহিঃস্ত ইলেকট্রন থাকে। তারা দুটি যুগল ইলেকট্রন ভাগাভাগি করে নেয়, ফলে দ্বৈত সন্নিবেশ বন্ধন সৃষ্টি হয়।
চিহ্নে প্রকাশ: O = O
নাইট্রোজেন অণু (N₂):
প্রতিটি নাইট্রোজেন পরমাণুর পাঁচটি করে বহিঃস্ত ইলেকট্রন থাকে। স্থিতিশীল হতে তারা তিনটি যুগল ইলেকট্রন ভাগ করে নেয়, ফলে ত্রৈধ সন্নিবেশ বন্ধন গঠিত হয়।
চিহ্নে প্রকাশ: N ≡ N
সন্নিবেশ বন্ধনের প্রকারভেদ
| প্রকার | ইলেকট্রন যুগলের সংখ্যা | উদাহরণ | 
|---|---|---|
| একক সন্নিবেশ বন্ধন | ১ যুগল | H₂, Cl₂, HCl | 
| দ্বৈত সন্নিবেশ বন্ধন | ২ যুগল | O₂, CO₂ | 
| ত্রৈধ সন্নিবেশ বন্ধন | ৩ যুগল | N₂, C₂H₂ | 
বৈশিষ্ট্য
- 
সাধারণত অধাতব পরমাণুর মধ্যে গঠিত হয়। 
- 
এটি দিকনির্দেশক প্রকৃতির এবং নির্দিষ্ট কোণ তৈরি করে। 
- 
কোভ্যালেন্ট যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটাঙ্ক তুলনামূলকভাবে কম। 
- 
এরা সাধারণত গ্যাস বা তরল অবস্থায় থাকে, যেমন H₂O, NH₃, CH₄ ইত্যাদি। 
- 
বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়, কারণ এদের মধ্যে কোনো মুক্ত আয়ন থাকে না। 
যুক্তিপূর্ণ বিশ্লেষণ
প্রত্যেক পরমাণু স্থিতিশীল হতে চায়—অর্থাৎ তার বহিঃস্ত স্তরে ৮টি (বা হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে ২টি) ইলেকট্রন রাখতে চায়। ধাতব পরমাণু সহজে ইলেকট্রন হারিয়ে আয়নিক বন্ধন গঠন করে, কিন্তু অধাতব পরমাণুরা ইলেকট্রন হারাতে বা পেতে পারে না। তাই তারা ইলেকট্রন যুগল ভাগাভাগির মাধ্যমে সন্নিবেশ বন্ধন গঠন করে। এই ভাগাভাগির ফলে উভয় পরমাণু শক্তির নিম্নস্তরে পৌঁছে যায় এবং বন্ধনটি স্থিতিশীল হয়।
উপসংহার
সন্নিবেশ বন্ধন প্রকৃতিতে রাসায়নিক স্থিতিশীলতা রক্ষার অন্যতম প্রধান উপায়। এই বন্ধনের কারণে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, পানি, কার্বন-যুক্ত যৌগসহ জীবনের প্রায় সব মৌলিক পদার্থ গঠিত হয়েছে। তাই বলা যায়, সন্নিবেশ বন্ধনই রাসায়নিক জগতের গঠন ও বৈচিত্র্যের অন্যতম ভিত্তি।