একক কাকে বলে?
 
                        একক বা “Unit” হলো কোনো ভৌত রাশির পরিমাণ প্রকাশের একটি নির্দিষ্ট মান বা মানদণ্ড, যার মাধ্যমে সেই রাশির পরিমাণ নির্ধারণ বা তুলনা করা যায়। অর্থাৎ, একক হলো এমন একটি নির্দিষ্ট পরিমাপ যা ব্যবহার করে আমরা বলি, কোনো ভৌত রাশির মান কত। উদাহরণস্বরূপ, দৈর্ঘ্যের একক হলো মিটার (m), সময়ের একক সেকেন্ড (s) এবং ভরের একক কিলোগ্রাম (kg)।
এককের মূল ধারণা ও প্রয়োজনীয়তা
একক নির্ধারণের উদ্দেশ্য হলো প্রতিটি ভৌত রাশির একটি নির্দিষ্ট ও মানসম্মত পরিমাপ পদ্ধতি স্থাপন করা, যাতে সারা পৃথিবীর মানুষ একইভাবে সেই রাশি পরিমাপ করতে পারে। একক না থাকলে পরিমাপের ফলাফল অস্পষ্ট ও তুলনাহীন হয়ে যেত।
এককের শ্রেণিবিন্যাস
একককে সাধারণত তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়:
মৌলিক একক (Fundamental Units):
এগুলো এমন একক, যেগুলো অন্য কোনো এককের সাহায্যে প্রকাশ করা যায় না। আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি (SI System)-এ ৭টি মৌলিক একক রয়েছে—
| ভৌত রাশি | মৌলিক একক | প্রতীক | 
|---|---|---|
| দৈর্ঘ্য | মিটার | m | 
| ভর | কিলোগ্রাম | kg | 
| সময় | সেকেন্ড | s | 
| তড়িৎ প্রবাহ | অ্যাম্পিয়ার | A | 
| তাপমাত্রা | কেলভিন | K | 
| পদার্থের পরিমাণ | মোল | mol | 
| আলোক তীব্রতা | ক্যান্ডেলা | cd | 
 গৌণ বা উদ্ভূত একক (Derived Units):
যেসব একক মৌলিক এককের সাহায্যে গঠিত হয়, তাদের গৌণ একক বলে।
উদাহরণ:
- 
বেগের একক = মিটার/সেকেন্ড (m/s) 
- 
ত্বরণের একক = মিটার/সেকেন্ড² (m/s²) 
- 
বলের একক = নিউটন (N) = kg·m/s² 
 সহায়ক একক (Supplementary Units):
কোণ ও ঘনকোণের একক এই শ্রেণিতে পড়ে।
- 
তল কোণ = রেডিয়ান (radian) 
- 
ঘন কোণ = স্টেরেডিয়ান (steradian) 
এককের আন্তর্জাতিক মান (SI System):
বিশ্বজুড়ে মাপজোকের একতা বজায় রাখতে ১৯৬০ সালে “Système International d’Unités (SI)” নামের আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি গৃহীত হয়। এটি এখন বৈজ্ঞানিক ও বাণিজ্যিক সব ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
এককের গুরুত্ব:
- 
পরিমাপে নির্ভুলতা ও সামঞ্জস্য নিশ্চিত করে। 
- 
আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও বাণিজ্যে সহজতা আনে। 
- 
বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে একতা বজায় রাখে। 
উপসংহার:
একক হলো পরিমাপের মূল ভিত্তি। এটি ছাড়া কোনো ভৌত রাশি নির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাই একক ব্যবস্থার মানদণ্ড অনুসরণ করা মানবজীবনের বৈজ্ঞানিক, শিল্প ও দৈনন্দিন কার্যকলাপে অপরিহার্য।