NGO-এর পূর্ণরূপ কী?
 
                        NGO-এর পূর্ণরূপ হলো ‘Non-Government Organization’। এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা সরকারি নয়, বরং বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হয় সমাজের উন্নয়নের জন্য। সাধারণত এই সংস্থাগুলো কোনো লাভের উদ্দেশ্যে কাজ করে না; বরং মানুষের কল্যাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবাধিকার রক্ষার মতো সামাজিক কাজে অবদান রাখে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এনজিও সমাজ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। নিচে এনজিও সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো:
• সংজ্ঞা ও উদ্দেশ্য: NGO অর্থ এমন একটি সংগঠন যা সরকার থেকে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা—বিশেষ করে যেখানে সরকার বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পৌঁছাতে পারে না, সেখানে সেবা প্রদান করা।
• প্রতিষ্ঠার মূল ভাবনা: এনজিও ধারণাটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘের গঠনের সময় থেকেই জোরালোভাবে সামনে আসে। জাতিসংঘের চার্টারে প্রথমবার “Non-Governmental Organization” শব্দটি ব্যবহৃত হয় ১৯৪৫ সালে। এরপর থেকেই সারা বিশ্বে সমাজকল্যাণমূলক এই সংগঠনগুলোর কার্যক্রম বিস্তৃত হতে থাকে।
• এনজিওর প্রধান কার্যক্রম:
- 
শিক্ষা ও সাক্ষরতা বৃদ্ধি: স্কুল নির্মাণ, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শিশু শ্রম প্রতিরোধ ইত্যাদি। 
- 
স্বাস্থ্যসেবা: বিনামূল্যে চিকিৎসা, মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচি, টিকাদান কার্যক্রম। 
- 
দারিদ্র্য বিমোচন: ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি। 
- 
নারীর ক্ষমতায়ন: নারীদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা উন্নয়নে সহায়তা। 
- 
পরিবেশ সংরক্ষণ: বৃক্ষরোপণ, জলবায়ু সচেতনতা বৃদ্ধি, দূষণ রোধে উদ্যোগ। 
- 
মানবাধিকার রক্ষা: আইনি সহায়তা, শিশু ও নারীর অধিকার সুরক্ষা, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি। 
• বাংলাদেশের এনজিও কার্যক্রম: বাংলাদেশে এনজিওগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার পর থেকে এদেশে এনজিওগুলো দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
কিছু পরিচিত এনজিও হলো:
- 
ব্র্যাক (BRAC): ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত, এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এনজিও। 
- 
গ্রামীণ ব্যাংক: নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। 
- 
আশা (ASA): ক্ষুদ্রঋণ ও নারীর ক্ষমতায়নে কার্যকরী একটি সংস্থা। 
- 
প্রশান্তি ট্রাস্ট, কারিতাস, সংস্থা, ইত্যাদিও বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে কাজ করছে। 
• এনজিও ও সরকারের সম্পর্ক: এনজিওগুলো সরকার থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করলেও তাদের কার্যক্রমের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও অনুমোদন থাকে। বাংলাদেশে NGO Affairs Bureau নামে একটি সরকারি সংস্থা এনজিও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে।
• এনজিওর অর্থায়নের উৎস: বেশিরভাগ এনজিও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা, বিদেশি সরকার, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা বা দেশীয় অনুদান থেকে অর্থ পায়। কিছু এনজিও নিজস্ব প্রকল্প ও সামাজিক ব্যবসা থেকেও আয় করে।
• সমাজে এনজিওর অবদান: এনজিও শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক পরিবর্তনেরও শক্তিশালী হাতিয়ার। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করা, নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি, শিশু অধিকার রক্ষা, এবং পরিবেশ রক্ষায় এনজিওগুলোর ভূমিকা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
সারাংশে বলা যায়, NGO মানে এমন এক মানবিক সংগঠন যা সরকারি প্রভাবমুক্ত থেকে সমাজের জন্য কাজ করে। তাদের প্রচেষ্টা সমাজকে আরও উন্নত, সচেতন ও মানবিক করে তুলছে প্রতিনিয়ত।