পোলারায়ন কাকে বলে?
 
                        পোলারায়ন বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে আলোকরশ্মি বা তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গের কম্পন নির্দিষ্ট একটি সমতলে সীমাবদ্ধ করা হয়। সহজভাবে বলা যায়, পোলারায়ন হলো আলোর কম্পনকে একটি নির্দিষ্ট দিক বা সমতলে কেন্দ্রীভূত করার প্রক্রিয়া। প্রাকৃতিক আলো বহু সমতলে কম্পিত হয়, কিন্তু পোলারায়নের মাধ্যমে সেই বহু-সমতলীয় কম্পনকে এক সমতলে সীমাবদ্ধ করা হয়।
এই প্রক্রিয়া পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, বিশেষ করে আলোর তরঙ্গ প্রকৃতি ও তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গের আচরণ বোঝার ক্ষেত্রে। পোলারায়নের ধারণা থেকেই প্রমাণিত হয় যে, আলো একটি অনুদৈর্ঘ্য নয়, বরং আনুপ্রস্থ তরঙ্গ (Transverse Wave), কারণ কেবল আনুপ্রস্থ তরঙ্গই পোলারায়িত হতে পারে।
পোলারায়নের সংজ্ঞা (সরলভাবে):
যখন কোনো অপ্রতিবিম্বিত বা প্রাকৃতিক আলোকরশ্মির কম্পন নির্দিষ্ট এক সমতলে সীমাবদ্ধ করা হয়, তখন সেই আলোকরশ্মিকে পোলারায়িত আলো বলে এবং প্রক্রিয়াটিকে পোলারায়ন বলে।
পোলারায়নের ধরণ
পোলারায়ন প্রধানত তিনভাবে ঘটে—
• প্রতিফলনের মাধ্যমে পোলারায়ন (Polarization by Reflection): আলো যখন কোনো প্রতিফলক পৃষ্ঠে নির্দিষ্ট কোণে পড়ে, তখন প্রতিফলিত আলোকরশ্মি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে পোলারায়িত হয়। এই বিশেষ কোণটিকে ব্রিউস্টারের কোণ (Brewster’s Angle) বলা হয়।
• বিচ্ছুরণের মাধ্যমে পোলারায়ন (Polarization by Scattering): বায়ুমণ্ডলে সূর্যালোকের পোলারায়ন ঘটে ধূলিকণা বা অণু দ্বারা বিচ্ছুরণের ফলে। এ কারণেই সূর্যের আলো আংশিকভাবে পোলারায়িত হয়।
• দ্বিবিজারণের মাধ্যমে পোলারায়ন (Polarization by Double Refraction): কিছু স্ফটিক, যেমন ক্যালসাইট (Calcite) বা কোয়ার্টজ (Quartz) দ্বিবিজারণ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এসব পদার্থের মধ্য দিয়ে আলো প্রবাহিত হলে তা দুইটি পোলারায়িত রশ্মিতে বিভক্ত হয়—একটি সাধারণ (Ordinary Ray) ও অন্যটি অসাধারণ (Extraordinary Ray)।
পোলারায়নের ব্যবহার ও গুরুত্ব
• সানগ্লাসে: সূর্যালোকের তীব্র ঝলক কমাতে পোলারাইজড লেন্স ব্যবহার করা হয়।
• ক্যামেরা ও ফটোগ্রাফিতে: প্রতিফলিত আলো কমিয়ে স্পষ্ট ছবি তোলার জন্য পোলারাইজিং ফিল্টার ব্যবহার করা হয়।
• ৩ডি সিনেমায়: দুটি চোখে দুটি ভিন্ন পোলারায়িত ছবি পাঠিয়ে ত্রিমাত্রিক ভিজ্যুয়াল তৈরি করা হয়।
• বৈজ্ঞানিক গবেষণায়: আলোর তরঙ্গ প্রকৃতি, অপটিক্যাল বৈশিষ্ট্য ও উপাদানের গঠন বিশ্লেষণে পোলারায়ন অপরিহার্য।
পোলারায়নের বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য
• এটি প্রমাণ করে যে আলো অনুদৈর্ঘ্য নয়, বরং আনুপ্রস্থ তরঙ্গ।
• পদার্থের প্রতিসরণ সূচক নির্ণয়ে পোলারায়ন ব্যবহার করা হয়।
• ব্রিউস্টার সূত্র (tan i = n) দ্বারা কোনো মাধ্যমের প্রতিসরণ সূচক নির্ণয় করা সম্ভব হয়।
সবশেষে বলা যায়, পোলারায়ন হলো আলোর কম্পনকে নির্দিষ্ট এক সমতলে সীমাবদ্ধ করার প্রক্রিয়া, যা আলোর তরঙ্গ প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে এবং আধুনিক অপটিক্যাল প্রযুক্তি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।