গ্যাসীয় পদার্থ কাকে বলে?

Avatar
calender 30-10-2025

গ্যাসীয় পদার্থ বলতে এমন পদার্থকে বোঝায়, যা স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও চাপে গ্যাস অবস্থায় থাকে এবং যার কোনো নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন নেই। গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলো একে অপরের থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে ও স্বাধীনভাবে চলাচল করে। ফলে এই পদার্থ সহজেই সঙ্কুচিত বা সম্প্রসারিত হতে পারে এবং যেকোনো পাত্রে ছড়িয়ে পড়ে তার সম্পূর্ণ স্থান দখল করে নেয়। এ কারণেই গ্যাসীয় পদার্থকে “অসংকুচিত ও মুক্ত গতি সম্পন্ন পদার্থ” বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ—অক্সিজেন (O₂), নাইট্রোজেন (N₂), কার্বন ডাই–অক্সাইড (CO₂), হিলিয়াম (He), ও হাইড্রোজেন (H₂) ইত্যাদি গ্যাসীয় পদার্থের অন্তর্ভুক্ত।

গ্যাসীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দেখা যায়, এর অণুগুলোর মধ্যে আকর্ষণ বল খুব দুর্বল এবং চলাচলের স্বাধীনতা অত্যন্ত বেশি। নিচে গ্যাসীয় পদার্থের প্রধান বৈশিষ্ট্য, গঠন, ও ব্যবহারিক গুরুত্ব তুলে ধরা হলো।

গ্যাসীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য
• গ্যাসীয় পদার্থের কোনো নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন থাকে না; এটি পাত্রের আকৃতি অনুযায়ী ছড়িয়ে পড়ে।
• অণুগুলোর মধ্যে ফাঁকা স্থান অনেক বেশি থাকে, ফলে ঘনত্ব খুব কম হয়।
• গ্যাস সহজে সঙ্কুচিত বা সম্প্রসারিত হতে পারে; অর্থাৎ সামান্য চাপ বা তাপমাত্রা পরিবর্তনে আয়তন অনেক পরিবর্তিত হয়।
• গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলো ক্রমাগত গতিশীল এবং সব দিকে সমানভাবে সংঘর্ষ করে।
• গ্যাসের চাপ (Pressure), আয়তন (Volume), ও তাপমাত্রা (Temperature)-এর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে; এ সম্পর্ক বয়েল ও চার্লসের সূত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়।
• গ্যাসীয় পদার্থ সহজেই মিশে যায় এবং একে অপরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে—এ প্রক্রিয়াকে Diffusion বলে।

গ্যাসীয় পদার্থের অণুর বিন্যাস
গ্যাসীয় অবস্থায় অণুগুলোর বিন্যাস অত্যন্ত শিথিল। নিচের টেবিলে তিনটি পদার্থের অবস্থার তুলনামূলক রূপ দেওয়া হলো—

পদার্থের অবস্থা অণুগুলোর অবস্থান অণুর গতি ঘনত্ব আকার ও আয়তন
কঠিন ঘনভাবে সাজানো কম বেশি নির্দিষ্ট
তরল মাঝারি দূরত্বে মাঝারি মাঝারি আয়তন নির্দিষ্ট, আকার নয়
গ্যাস দূরে অবস্থান করে অত্যন্ত বেশি খুব কম আকার ও আয়তন অনির্দিষ্ট

গ্যাসীয় পদার্থের উদাহরণ
অক্সিজেন (O₂): জীবজগতে শ্বাস–প্রশ্বাসের জন্য অপরিহার্য।
কার্বন ডাই–অক্সাইড (CO₂): উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির (প্রকাশ–প্রক্রিয়া) মূল উপাদান।
নাইট্রোজেন (N₂): বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৭৮% গঠন করে এবং সার ও রাসায়নিক উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
হিলিয়াম (He): বেলুন ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়, এটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস।
হাইড্রোজেন (H₂): জ্বালানি ও রাসায়নিক উৎপাদনে বহুল ব্যবহৃত।

গ্যাসীয় পদার্থের ব্যবহারিক গুরুত্ব
জীবনধারণে সহায়ক: মানুষ ও প্রাণীর শ্বাস–প্রশ্বাসে অক্সিজেন অপরিহার্য, আর উদ্ভিদ কার্বন ডাই–অক্সাইড ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করে।
শিল্পে ব্যবহৃত: নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া, অক্সিজেন ও অ্যাসিটিলিন গ্যাস বিভিন্ন শিল্প প্রক্রিয়ায় যেমন সার উৎপাদন, ওয়েল্ডিং ও ইস্পাত প্রস্তুতে ব্যবহৃত হয়।
চিকিৎসায় প্রয়োগ: অক্সিজেন সিলিন্ডার রোগীর শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।
পরিবেশ ও আবহাওয়ায় ভূমিকা: গ্যাসীয় পদার্থ যেমন জলীয় বাষ্প ও কার্বন ডাই–অক্সাইড পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

সবশেষে বলা যায়, গ্যাসীয় পদার্থ হলো এমন পদার্থ যা স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও চাপে নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন ধারণ করে না, বরং স্বাধীনভাবে চলাচল করে পাত্রের পুরো স্থান দখল করে নেয়। এর ভৌত বৈশিষ্ট্য, অণুর গতি এবং ব্যবহারিক প্রয়োগের কারণে এটি প্রকৃতি ও বিজ্ঞানের একটি মৌলিক ও অপরিহার্য বিষয়।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD