অপত্য কোষ কী?
 
                        অপত্য কোষ হলো এমন একটি নতুন কোষ, যা একটি পূর্ববর্তী মাতৃকোষের বিভাজনের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ, একটি কোষ যখন মাইটোসিস বা মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়, তখন যে নতুন কোষগুলো তৈরি হয়, সেগুলোকেই অপত্য কোষ বলে। এই কোষগুলো মাতৃকোষের জিনগত উপাদান বহন করে এবং জীবের বৃদ্ধি, পুনর্গঠন, প্রজনন ও ক্ষত নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অপত্য কোষের গঠন ও বৈশিষ্ট্য জীবের প্রকার এবং বিভাজনের ধরণের ওপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, এককোষী প্রাণীতে অপত্য কোষই নতুন জীব হিসেবে কাজ করে, আর বহুকোষী প্রাণীতে এগুলো শরীরের বৃদ্ধি ও টিস্যু গঠনে সহায়তা করে।
অপত্য কোষের উৎপত্তি প্রক্রিয়া
অপত্য কোষ উৎপন্ন হয় কোষ বিভাজনের মাধ্যমে। কোষ বিভাজনের দুইটি প্রধান ধরণ রয়েছে—
• মাইটোসিস (Mitosis): এখানে এক মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে দুটি অভিন্ন অপত্য কোষ তৈরি করে। এরা মাতৃকোষের সমান সংখ্যক ক্রোমোজোম বহন করে। এটি দেহকোষে ঘটে এবং জীবের বৃদ্ধি, টিস্যু মেরামত ও ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে।
• মিয়োসিস (Meiosis): এখানে এক মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে চারটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে, প্রতিটির ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেক হয়। এটি প্রজনন কোষে ঘটে, যেমন শুক্রাণু ও ডিম্বাণু গঠনে।
অপত্য কোষের প্রধান বৈশিষ্ট্য
• প্রতিটি অপত্য কোষের উৎপত্তি হয় এক মাতৃকোষ থেকে।
• মাইটোসিসে উৎপন্ন অপত্য কোষগুলো জিনগতভাবে মাতৃকোষের অনুরূপ, কিন্তু মিয়োসিসে উৎপন্ন অপত্য কোষগুলো জিনগতভাবে ভিন্ন।
• জীবের বৃদ্ধি, বিকাশ, কোষ পুনর্নির্মাণ ও প্রজননে অপত্য কোষ অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।
• অপত্য কোষের জীবনচক্র আবার নতুন কোষ বিভাজনের মাধ্যমে চলমান থাকে।
উদাহরণ
• মানুষের ত্বকের কোষ নিয়মিতভাবে বিভাজিত হয়ে নতুন অপত্য কোষ তৈরি করে, যা পুরনো বা মৃত কোষের জায়গা নেয়।
• ইস্ট (Yeast) কোষ কলিকাজনিত বিভাজনের মাধ্যমে অপত্য কোষ তৈরি করে, যা পরবর্তীতে স্বতন্ত্র জীব হয়ে ওঠে।
• প্রাণীর শুক্রাণু ও ডিম্বাণু উভয়ই মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন অপত্য কোষ।
অপত্য কোষের জৈবিক গুরুত্ব
অপত্য কোষ জীবজগতে ধারাবাহিকতার প্রতীক। এগুলোর মাধ্যমেই জীবন প্রবাহিত হয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। এরা জীবদেহের পুনর্গঠন, ক্ষত নিরাময় ও কোষীয় সমন্বয় বজায় রাখে। যদি অপত্য কোষ তৈরি না হতো, তবে কোনো জীব বৃদ্ধি, পুনরুৎপাদন বা টিস্যু পুনর্নির্মাণ করতে পারত না।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, অপত্য কোষ হলো জীবনের মৌলিক ধারক, যা এক মাতৃকোষের বিভাজনের ফলে উৎপন্ন হয় এবং জীবের বৃদ্ধি, প্রজনন ও বংশগতি রক্ষায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।