বায়ু দূষণের ৩০ টি কারণ? ও বায়ু দূষণ রোধের উপায়
 
                        বায়ু দূষণ হলো এমন এক পরিবেশগত সমস্যা, যেখানে বায়ুতে ধূলিকণা, গ্যাস, ধোঁয়া ও বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা বেড়ে যায় এবং জীবজগৎ ও প্রকৃতির জন্য তা ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। এর প্রধান কারণ মানবসৃষ্ট কার্যকলাপ, যেমন শিল্পকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের নির্গমন, বন নিধন, ইত্যাদি। নিচে বায়ু দূষণের ৩০টি প্রধান কারণ ও প্রতিরোধের কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো।
বায়ু দূষণের ৩০টি কারণ:
১. শিল্পকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও গ্যাস।
২. যানবাহনের ধোঁয়া ও তেল পোড়ানোর ফলে কার্বন নির্গমন।
৩. কয়লা, পেট্রোল, ডিজেল ও কেরোসিনের ব্যবহার।
৪. ইটভাটা থেকে নির্গত কার্বন মনোক্সাইড ও সালফার ডাই-অক্সাইড।
৫. বন ও গাছপালা নিধন।
৬. বর্জ্য পোড়ানো ও আবর্জনা দহন।
৭. কৃষিক্ষেতে অতিরিক্ত কীটনাশক ও সার ব্যবহার।
৮. ঘরের রান্নায় কাঠ, কয়লা ও মাটি তেল ব্যবহার।
৯. বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার।
১০. প্লাস্টিক পোড়ানোর ধোঁয়া।
১১. নির্মাণকাজের ধূলাবালি ও সিমেন্টের কণা।
১২. রাস্তার ধূলিকণা ও যান চলাচলের কারণে ধুলো ছড়ানো।
১৩. প্রাকৃতিক আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ।
১৪. খনন ও মাটি কাটার কাজ।
১৫. সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্যের ধোঁয়া।
১৬. বিমান ও জাহাজ চলাচলের ধোঁয়া।
১৭. শহুরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অবহেলা।
১৮. গৃহস্থালি রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার।
১৯. ধাতু গলানোর কারখানা থেকে ধোঁয়া।
২০. বায়োগ্যাস ও মিথেন গ্যাস নির্গমন।
২১. জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি।
২২. অপরিকল্পিত নগরায়ণ।
২৩. বৃষ্টিহীনতা ও খরা।
২৪. ধুলিঝড় ও মরুভূমির ধূলিকণা।
২৫. পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির অভাব।
২৬. বায়ুর চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে এমন উঁচু ভবন নির্মাণ।
২৭. অপরিষ্কার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
২৮. যানবাহনের পুরনো ইঞ্জিনের ব্যবহার।
২৯. কৃষিজ বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা।
৩০. জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্যাসের ঘনত্ব বৃদ্ধি।
বায়ু দূষণ রোধের উপায়:
- 
গাছ লাগানো: বায়ু পরিশুদ্ধ করার সবচেয়ে প্রাকৃতিক উপায় হলো বৃক্ষরোপণ। প্রতিটি নাগরিকের নিয়মিত গাছ লাগানো উচিত। 
- 
শিল্পকারখানায় নির্গমন নিয়ন্ত্রণ: প্রতিটি কারখানায় ধোঁয়া শোধনাগার (Filter) স্থাপন বাধ্যতামূলক করা উচিত। 
- 
পরিষ্কার জ্বালানির ব্যবহার: কয়লা বা তেলের বদলে এলপিজি, বায়োগ্যাস ও সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন। 
- 
যানবাহন নিয়ন্ত্রণ: পুরনো যানবাহন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব ইঞ্জিন চালু করতে হবে। 
- 
ইটভাটার বিকল্প ব্যবস্থা: আধুনিক প্রযুক্তি যেমন জিগজ্যাগ বা হাইব্রিড ইটভাটা ব্যবহার করতে হবে। 
- 
বর্জ্য পোড়ানো নিষিদ্ধ: বর্জ্য পোড়ানোর পরিবর্তে পুনর্ব্যবহার (Recycling) ও সঠিকভাবে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। 
- 
কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক ব্যবহার হ্রাস: জৈব সার ও প্রাকৃতিক কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ানো উচিত। 
- 
গণসচেতনতা বৃদ্ধি: বিদ্যালয় ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে বায়ু দূষণের ক্ষতি ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে। 
- 
আইন প্রয়োগ: পরিবেশ সংরক্ষণ আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। 
- 
নবায়নযোগ্য জ্বালানি: সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুশক্তি ও জলবিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে। 
উপসংহার:
বায়ু দূষণ শুধু পরিবেশ নয়, মানবজীবনের জন্যও মারাত্মক হুমকি। এটি শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, ক্যানসার ও শিশুদের শারীরিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। বৃক্ষরোপণ, পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি, ও সচেতন জীবনযাপনের মাধ্যমেই একটি দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব।