স্থিতি শক্তি কাকে বলে?
 
                        যে শক্তি কোনো বস্তুর অবস্থান বা উচ্চতার কারণে সংরক্ষিত থাকে তাকে স্থিতি শক্তি (Potential Energy) বলে। এটি এমন একধরনের শক্তি যা বস্তু স্থির অবস্থায় থাকলেও তার অবস্থান বা বিন্যাসের কারণে কাজ করার সক্ষমতা ধরে রাখে। অর্থাৎ, যদি কোনো বস্তুকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় তোলা হয় বা কোনো স্প্রিং টেনে ধরা হয়, তখন সেই বস্তুতে স্থিতি শক্তি সঞ্চিত হয়।
স্থিতি শক্তির বিশদ বিশ্লেষণ:
স্থিতি শক্তি মূলত দুই কারণে উৎপন্ন হয়—মহাকর্ষীয় আকর্ষণ এবং স্থিতিস্থাপক বিকৃতি। কোনো বস্তুকে যখন পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে কিছুটা উচ্চতায় তোলা হয়, তখন তা পৃথিবীর মহাকর্ষের বিপরীতে কাজ করে এবং এতে শক্তি সঞ্চিত হয়। এই শক্তিই মহাকর্ষীয় স্থিতি শক্তি নামে পরিচিত। আবার, যদি কোনো স্প্রিং বা রাবার টেনে বা চেপে ধরা হয়, তখন তার আকার পরিবর্তনের ফলে সঞ্চিত শক্তিকে স্থিতিস্থাপক স্থিতি শক্তি বলে।
স্থিতি শক্তির সূত্র:
মহাকর্ষীয় স্থিতি শক্তির সূত্র হলো—
Ep = mgh
যেখানে,
- 
Ep = স্থিতি শক্তি 
- 
m = বস্তুর ভর (কেজি) 
- 
g = মহাকর্ষজ ত্বরণ (৯.৮ মি/সে²) 
- 
h = উচ্চতা (মিটার) 
উদাহরণ:
- 
যদি ২ কেজি ভরের একটি পাথরকে ৫ মিটার উচ্চতায় তোলা হয়, তবে 
 Ep = mgh = ২ × ৯.৮ × ৫ = ৯৮ জুল
 অর্থাৎ, পাথরটিতে ৯৮ জুল স্থিতি শক্তি সঞ্চিত হয়।
- 
একটি স্প্রিং টানলে বা চেপে ধরলে, তার মধ্যে স্থিতিস্থাপক স্থিতি শক্তি জমা হয় যা মুক্ত করলে পুনরায় গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। 
স্থিতি শক্তির ধরন:
- 
মহাকর্ষীয় স্থিতি শক্তি: বস্তুর উচ্চতার কারণে সঞ্চিত শক্তি। 
- 
স্থিতিস্থাপক স্থিতি শক্তি: স্প্রিং, রাবার বা ইলাস্টিক পদার্থের আকার পরিবর্তনের কারণে সঞ্চিত শক্তি। 
- 
রাসায়নিক স্থিতি শক্তি: রাসায়নিক পদার্থের অণু বা পরমাণুর বন্ধনে সঞ্চিত শক্তি। 
মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ:
- 
এটি বস্তুর অবস্থান বা বিন্যাসের ওপর নির্ভরশীল। 
- 
বস্তুটি স্থির অবস্থায় থাকলেও শক্তি সঞ্চিত থাকে। 
- 
প্রয়োজনে এই শক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে। 
উপসংহার:
অতএব, কোনো বস্তুর অবস্থান বা বিন্যাসের কারণে যে শক্তি বস্তুর মধ্যে সঞ্চিত থাকে এবং প্রয়োজনে যা কাজ করার ক্ষমতা রাখে, তাকেই স্থিতি শক্তি বলা হয়। এটি শক্তির এমন এক রূপ যা প্রকৃতির বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।