গলন কাকে বলে?
 
                        গলন হলো কোনো কঠিন পদার্থে তাপ প্রয়োগের ফলে তা তরল অবস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, যখন কোনো কঠিন পদার্থকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা পর্যন্ত উত্তপ্ত করা হয় এবং তার অণুগুলোর পারস্পরিক আকর্ষণ বল দুর্বল হয়ে যায়, তখন পদার্থটি তরলে পরিণত হয়—এই অবস্থান্তরকেই গলন বলে। ইংরেজিতে একে বলা হয় Melting।
সংজ্ঞা:
“যে প্রক্রিয়ায় কোনো কঠিন পদার্থ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় তাপ গ্রহণ করে তরলে পরিণত হয়, তাকে গলন বলে, এবং যে তাপমাত্রায় এটি ঘটে তাকে গলনাঙ্ক (Melting Point) বলে।”
উদাহরণ:
– বরফে তাপ দিলে তা পানিতে পরিণত হয়।
– মোম গরম করলে গলে তরল আকার ধারণ করে।
– লোহা বা সোনা উচ্চ তাপমাত্রায় গলিয়ে তরল ধাতু তৈরি করা যায়।
গলনের কারণ:
কঠিন পদার্থে অণুগুলোর মধ্যে আকর্ষণ বল শক্তিশালী থাকে, ফলে তারা ঘনভাবে সাজানো থাকে। তাপ দিলে অণুগুলোর গতি বৃদ্ধি পায় এবং আকর্ষণ বল দুর্বল হয়ে যায়। এই অবস্থায় অণুগুলো একে অপরের ওপর সহজে সরে যেতে পারে, ফলে পদার্থ তরলে পরিণত হয়।
গলনাঙ্ক (Melting Point):
যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ গলতে শুরু করে, সেটিই তার গলনাঙ্ক।
উদাহরণ:
– বরফের গলনাঙ্ক = ০° সেলসিয়াস
– মোমের গলনাঙ্ক ≈ ৬২° সেলসিয়াস
– লোহার গলনাঙ্ক ≈ ১৫৩৫° সেলসিয়াস
গলন প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য:
– এটি একটি অবস্থা পরিবর্তন প্রক্রিয়া (solid → liquid)।
– পদার্থ তাপ গ্রহণ করলেও তাপমাত্রা গলনের সময় অপরিবর্তিত থাকে।
– গলন প্রক্রিয়ায় শক্তি শোষিত হয়, কারণ অণুগুলোর আকর্ষণ বল ভাঙতে হয়।
– গলন একটি উষ্মাশোষী (Endothermic) প্রক্রিয়া।
গলন তাপ (Latent Heat of Fusion):
গলন প্রক্রিয়ায় কোনো পদার্থের একক ভরকে কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তর করতে যত পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয়, তাকে গলন তাপ বলা হয়।
উদাহরণ: ১ কেজি বরফ গলাতে প্রায় ৩৩৪ কিলোজুল তাপ প্রয়োজন।
গলনের বাস্তব প্রয়োগ:
– ধাতু গলিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও অলঙ্কার তৈরি করা হয়।
– রান্নায় তেল বা মাখন গলিয়ে ব্যবহৃত হয়।
– শিল্পে প্লাস্টিক, গ্লাস বা মোম গলিয়ে নতুন আকারে ঢালা হয়।
সবশেষে বলা যায়, গলন হলো তাপের প্রভাবে কোনো কঠিন পদার্থের তরল অবস্থায় রূপান্তর প্রক্রিয়া, যা পদার্থের অণুগত পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এটি পদার্থের অবস্থান্তরের একটি মৌলিক রূপ, যার মাধ্যমে প্রকৃতিতে তাপ ও শক্তির প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যায়।