ক্ষার ও ক্ষারক-এর ভিতর পার্থক্য কী?
 
                        ক্ষার (Alkali) ও ক্ষারক (Base) উভয়ই রাসায়নিকভাবে তিতকুটে স্বাদের, ছুঁলে পিচ্ছিল ও লাল লিটমাস কাগজকে নীল করে—তবু এদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। ক্ষার হলো ক্ষারকের একটি বিশেষ রূপ, অর্থাৎ সব ক্ষারই ক্ষারক, কিন্তু সব ক্ষারক ক্ষার নয়।
মূল পার্থক্য:
ক্ষারক হলো এমন পদার্থ যা পানিতে দ্রবীভূত হোক বা না হোক, অম্লের (acid) সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি তৈরি করে। অন্যদিকে, ক্ষার হলো সেই ক্ষারক যা পানিতে দ্রবীভূত হয়ে হাইড্রক্সাইড (OH⁻) আয়ন উৎপন্ন করে এবং শক্তিশালীভাবে অম্ল নিরপেক্ষ করে।
সহজ সংজ্ঞা:
– ক্ষারক (Base): যে পদার্থ অম্লের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি উৎপন্ন করে, তাকে ক্ষারক বলে।
– ক্ষার (Alkali): যে ক্ষারক পানিতে দ্রবীভূত হয়ে হাইড্রক্সাইড আয়ন (OH⁻) উৎপন্ন করে, তাকে ক্ষার বলে।
রাসায়নিক উদাহরণসহ পার্থক্য:
| পার্থক্যের দিক | ক্ষারক (Base) | ক্ষার (Alkali) | 
|---|---|---|
| সংজ্ঞা | অম্লের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি তৈরি করে | পানিতে দ্রবীভূত ক্ষারক | 
| দ্রাব্যতা | অনেক ক্ষারক পানিতে অদ্রবণীয় | সব ক্ষার পানিতে দ্রবণীয় | 
| আয়ন উৎপন্ন করে | হাইড্রক্সাইড আয়ন সব সময় উৎপন্ন নাও করতে পারে | দ্রবণে OH⁻ আয়ন উৎপন্ন করে | 
| উদাহরণ | Cu(OH)₂, Zn(OH)₂, Al(OH)₃ | NaOH, KOH, LiOH, Ca(OH)₂ | 
| প্রকৃতি | শক্তিশালী বা দুর্বল উভয়ই হতে পারে | সাধারণত শক্তিশালী | 
| অম্ল নিরপেক্ষ করার ক্ষমতা | সীমিত | অধিক কার্যকরভাবে নিরপেক্ষ করে | 
উদাহরণ বিশ্লেষণ:
– সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH): পানিতে দ্রবীভূত হয়ে Na⁺ ও OH⁻ আয়ন দেয় → এটি ক্ষার।
– কপার (II) হাইড্রক্সাইড (Cu(OH)₂): এটি পানিতে অদ্রবণীয় হলেও অম্লের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ তৈরি করে → এটি ক্ষারক।
রাসায়নিক বিক্রিয়া উদাহরণ:
NaOH + HCl → NaCl + H₂O
এখানে NaOH ক্ষার, কারণ এটি দ্রবণীয় এবং OH⁻ আয়ন উৎপন্ন করে।
Cu(OH)₂ + 2HCl → CuCl₂ + 2H₂O
এখানে Cu(OH)₂ ক্ষারক, কারণ এটি অম্লের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি তৈরি করে, যদিও এটি পানিতে দ্রবীভূত হয় না।
সারসংক্ষেপ:
– সব ক্ষারই ক্ষারক, কিন্তু সব ক্ষারক ক্ষার নয়।
– ক্ষারক অম্লের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি তৈরি করে, আর ক্ষার তা করে পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায়।
– ক্ষার সাধারণত সোডিয়াম, পটাসিয়াম বা ক্যালসিয়াম জাতীয় ধাতুর হাইড্রক্সাইড।
সবশেষে বলা যায়, ক্ষার হলো পানিতে দ্রবণীয় ক্ষারক, যা অম্লকে দ্রুত নিরপেক্ষ করে, আর ক্ষারক হলো সেই পদার্থ যা অম্লের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি গঠন করে—দ্রবণীয় বা অদ্রবণীয় যাই হোক না কেন।