সুশাসন কাকে বলে?
 
                        সুশাসন হলো এমন এক প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে জনগণের কল্যাণ, ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। অর্থাৎ, রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম যখন ন্যায়, দক্ষতা ও সততার ভিত্তিতে পরিচালিত হয় এবং জনগণ সেই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, তখন সেটিকে সুশাসন বলা হয়। ইংরেজিতে একে বলা হয় Good Governance।
সংজ্ঞা অনুযায়ী:
সুশাসন হলো—“রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন পরিচালনার এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ, জবাবদিহিতা, ন্যায়পরায়ণতা ও আইনানুগতা বজায় থাকে।”
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (UNDP)-এর মতে, সুশাসন হলো এমন প্রশাসনিক প্রক্রিয়া যা জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী কার্যকর, ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করে।
সুশাসনের মূল বৈশিষ্ট্য:
স্বচ্ছতা (Transparency):
সুশাসনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রম জনসমক্ষে স্পষ্ট ও উন্মুক্ত থাকে, যাতে নাগরিকরা তা পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
জবাবদিহিতা (Accountability):
রাষ্ট্রের কর্মকর্তা, প্রতিষ্ঠান ও নেতৃবৃন্দ জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে। তাদের কাজের জন্য তারা আইনি ও নৈতিকভাবে জবাবদিহি করে।
আইনের শাসন (Rule of Law):
সুশাসনে প্রত্যেক নাগরিক ও সরকারি সংস্থা একই আইনের অধীন থাকে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
অংশগ্রহণ (Participation):
জনগণ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নিতে পারে, যা গণতন্ত্রের ভিত্তি।
দক্ষতা ও কার্যকারিতা (Efficiency and Effectiveness):
সুশাসনে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার হয় এবং নীতি বাস্তবায়ন হয় জনগণের চাহিদা অনুযায়ী।
ন্যায়বিচার ও সমতা (Equity and Justice):
সব নাগরিককে সমান সুযোগ ও অধিকার দেওয়া হয়, যাতে কেউ বঞ্চিত না হয়।
দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি (Strategic Vision):
সুশাসন কেবল তাৎক্ষণিক লাভের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণের কথাও বিবেচনা করে পরিকল্পনা তৈরি করে।
সুশাসনের গুরুত্ব:
– রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার, শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করে।
– দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি কমিয়ে আনে।
– অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।
– জনগণের আস্থা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করে।
– টেকসই উন্নয়ন ও সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করে।
সুশাসনের অভাবের ফলে যা ঘটে:
– দুর্নীতি, বৈষম্য ও অন্যায় বৃদ্ধি পায়।
– সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হয়।
– সমাজে অস্থিরতা, দারিদ্র্য ও অনিয়ম বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে:
বাংলাদেশে সুশাসনের মূল ভিত্তি হলো—সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, দুর্নীতির দমন, জনগণের অংশগ্রহণ ও মানবাধিকারের সুরক্ষা। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ যেমন ই-গভর্নেন্স, তথ্য অধিকার আইন, ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সবশেষে বলা যায়, সুশাসন মানে শুধু প্রশাসনিক দক্ষতা নয়, বরং জনগণের আস্থা, ন্যায়, সততা ও জবাবদিহিতার সমন্বিত ব্যবস্থা। এটি এমন এক নীতি যেখানে রাষ্ট্রের সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে থাকে জনগণের কল্যাণ ও মানবিক মূল্যবোধের সংরক্ষণ।