বায়বীয় পদার্থ কাকে বলে?
 
                        বায়বীয় পদার্থ হলো সেই পদার্থ যা স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও চাপে গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। অর্থাৎ, যেসব পদার্থের অণুগুলোর মধ্যকার আকর্ষণ বল খুব দুর্বল এবং তারা স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে, সেসব পদার্থকে বায়বীয় পদার্থ বলা হয়। ইংরেজিতে একে বলা হয় Gaseous Substances বা Gaseous Matter।
মূল ধারণা:
বায়বীয় পদার্থের কোনো নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন থাকে না। এটি যেকোনো পাত্রে রাখলে সেই পাত্রের পুরো জায়গা জুড়ে বিস্তৃত হয়। কারণ, গ্যাসীয় অণুগুলোর মধ্যকার ফাঁক অনেক বেশি এবং তারা ক্রমাগত উচ্চ গতিতে চলাচল করে।
উদাহরণ:
অক্সিজেন (O₂), নাইট্রোজেন (N₂), হাইড্রোজেন (H₂), কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO₂), হিলিয়াম (He), মিথেন (CH₄), অ্যামোনিয়া (NH₃) ইত্যাদি বায়বীয় পদার্থের সাধারণ উদাহরণ।
বৈশিষ্ট্য:
– নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন নেই; পাত্রের আকার অনুযায়ী ছড়িয়ে পড়ে।
– অণুগুলোর মধ্যে আকর্ষণ বল খুব দুর্বল এবং ফাঁক অনেক বেশি।
– অণুগুলোর গতিশক্তি (kinetic energy) বেশি।
– গ্যাস সংকোচনযোগ্য (compressible), অর্থাৎ চাপ দিলে আয়তন কমে যায়।
– সহজে সম্প্রসারিত (expandable) হয়, অর্থাৎ চাপ কমলে আয়তন বাড়ে।
– গ্যাস প্রবাহিত হতে পারে এবং মিশ্রিত হয় (diffusion)।
বায়বীয় পদার্থের আচরণ বর্ণনা করার সূত্র:
গ্যাসের আচরণ বোঝাতে বিজ্ঞানীরা কয়েকটি সূত্র দিয়েছেন—
– বয়েলের সূত্র: নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় চাপ বাড়লে আয়তন কমে।
– চার্লসের সূত্র: নির্দিষ্ট চাপে তাপমাত্রা বাড়লে আয়তন বাড়ে।
– আভোগাদ্রোর সূত্র: সমান তাপমাত্রা ও চাপে সমান আয়তনের গ্যাসে সমান সংখ্যক অণু থাকে।
গ্যাসের অবস্থা বোঝাতে সমীকরণ:
বায়বীয় পদার্থের অবস্থার সম্পর্ক প্রকাশ করা হয় গ্যাসের সাধারণ সমীকরণে—
PV = nRT
এখানে,
P = চাপ (Pressure)
V = আয়তন (Volume)
n = মোলের সংখ্যা (Number of moles)
R = গ্যাস ধ্রুবক (Gas constant)
T = তাপমাত্রা (Temperature)
গুরুত্ব ও প্রয়োগ:
– জীবজগতে শ্বাস-প্রশ্বাসে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ভূমিকা অপরিসীম।
– শিল্পক্ষেত্রে অ্যামোনিয়া, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি গ্যাস সার, জ্বালানি, ওষুধ ও প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
– বিজ্ঞান গবেষণা, রকেট ইঞ্জিন, শীতলীকরণ ও চিকিৎসা প্রযুক্তিতেও বায়বীয় পদার্থের ব্যাপক ব্যবহার আছে।
সবশেষে বলা যায়, বায়বীয় পদার্থ হলো এমন পদার্থ যা গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে এবং যার অণুগুলো মুক্তভাবে চলাচল করে। এটি পদার্থের তিনটি প্রধান অবস্থার (ঠোস, তরল ও বায়বীয়) মধ্যে সবচেয়ে হালকা ও গতিশীল অবস্থা, যা প্রকৃতি ও প্রযুক্তি উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।