রসায়নে সংকরায়ন বলতে কী বোঝায়?
 
                        রসায়নে সংকরায়ন (Hybridization) বলতে পরমাণুর অভ্যন্তরে ভিন্ন শক্তিস্তর বা ভিন্ন ধরনের কক্ষপথের (orbitals) মিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন একগুচ্ছ সমমানের (equivalent) কক্ষপথ গঠনের প্রক্রিয়াকে বোঝায়। এই প্রক্রিয়ার ফলে নতুন কক্ষপথগুলো শক্তি ও আকারে সমান হয় এবং তারা রাসায়নিক বন্ধন গঠনে অংশগ্রহণ করে। সংকরায়নের ধারণা প্রথম দেন জার্মান রসায়নবিদ লিনাস পাউলিং (Linus Pauling), যিনি ১৯৩১ সালে এই তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করেন।
সংজ্ঞা অনুযায়ী:
সংকরায়ন হলো—“দুটি বা তার বেশি পারমাণবিক কক্ষপথের পারস্পরিক মিশ্রণের মাধ্যমে সমমানের নতুন কক্ষপথ (hybrid orbitals) গঠনের প্রক্রিয়া।”
সংকরায়নের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন:
পরমাণুগুলি যখন রাসায়নিক বন্ধন গঠন করে, তখন বাস্তবে তাদের কক্ষপথগুলো একে অপরের সঙ্গে অভিসৃত হয়। কিন্তু সব কক্ষপথ একই শক্তিসম্পন্ন নয়। তাই বন্ধন স্থিতিশীল করতে এবং উপযুক্ত জ্যামিতি (shape) বজায় রাখতে কক্ষপথগুলিকে সমমানের করতে হয়। সেই প্রক্রিয়াটিই সংকরায়ন।
সংকরায়নের ধরন:
রসায়নে বিভিন্ন ধরনের সংকরায়ন দেখা যায়, যা নির্ভর করে কোন কোন কক্ষপথ মিশ্রিত হচ্ছে তার ওপর।
| সংকরায়নের ধরন | অংশগ্রহণকারী কক্ষপথ | সংকর কক্ষপথের সংখ্যা | অণুর আকৃতি | উদাহরণ | 
|---|---|---|---|---|
| sp সংকরায়ন | ১ s + ১ p | ২ | সরলরেখীয় (linear) | BeCl₂, CO₂ | 
| sp² সংকরায়ন | ১ s + ২ p | ৩ | ত্রিভুজাকার সমতল (trigonal planar) | BF₃, C₂H₄ | 
| sp³ সংকরায়ন | ১ s + ৩ p | ৪ | চতুর্মুখী (tetrahedral) | CH₄, NH₃, H₂O | 
| sp³d সংকরায়ন | ১ s + ৩ p + ১ d | ৫ | ত্রিবিমাত্রিক দ্বিপিরামিড (trigonal bipyramidal) | PCl₅ | 
| sp³d² সংকরায়ন | ১ s + ৩ p + ২ d | ৬ | অষ্টাভুজ (octahedral) | SF₆ | 
উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা:
মিথেন (CH₄) অণুতে কার্বনের মূল কক্ষপথগুলো (2s এবং 2p) বিভিন্ন শক্তিসম্পন্ন। কিন্তু CH₄-এ চারটি সমান বন্ধন থাকে। তাই বন্ধন সমান রাখতে 2s ও 2p কক্ষপথগুলো মিশে sp³ সংকরায়ন গঠন করে, যা চারটি সমমানের কক্ষপথ তৈরি করে।
সংকরায়নের বৈশিষ্ট্য:
– নতুন কক্ষপথগুলির শক্তি ও আকৃতি সমান হয়।
– সংকর কক্ষপথগুলির অক্ষ বরাবর সর্বাধিক ইলেকট্রন ঘনত্ব থাকে।
– এটি অণুর বন্ধনের কোণ ও জ্যামিতি নির্ধারণ করে।
– সংকরায়ন সাধারণত সমযোজী বন্ধন (Covalent bond) গঠনের সময় ঘটে।
গুরুত্ব:
– সংকরায়ন অণুর স্থিতিশীলতা ব্যাখ্যা করে।
– এটি বন্ধনের কোণ (bond angle) ও অণুর গঠন (molecular geometry) নির্ধারণে সহায়তা করে।
– জটিল অণুর গঠন যেমন CH₄, NH₃, BF₃, CO₂ প্রভৃতি সহজে ব্যাখ্যা করা যায়।
সবশেষে বলা যায়, সংকরায়ন রসায়নের একটি মৌলিক ধারণা যা ব্যাখ্যা করে কীভাবে বিভিন্ন শক্তিসম্পন্ন কক্ষপথ মিশে সমমানের কক্ষপথ তৈরি করে স্থিতিশীল রাসায়নিক বন্ধন গঠন করে। এর মাধ্যমে অণুর আকার, বন্ধন কোণ ও স্থিতিশীলতা বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ধারণ করা যায়।