বাইনারি কাকে বলে?
 
                        বাইনারি হলো এমন একটি সংখ্যা পদ্ধতি বা কোডিং ব্যবস্থা, যেখানে শুধুমাত্র দুটি সংখ্যা—‘০’ (শূন্য) ও ‘১’ (এক)—ব্যবহার করা হয়। এটি কম্পিউটার ও ডিজিটাল যন্ত্রের মৌলিক ভাষা, কারণ সব ইলেকট্রনিক ডেটা, নির্দেশনা ও গণনা এই দুইটি প্রতীকের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। ইংরেজিতে একে বলা হয় Binary Number System।
সংজ্ঞা অনুযায়ী:
বাইনারি হলো একটি দ্বিমূলক সংখ্যা পদ্ধতি, যার ভিত্তি (Base) হলো ২। অর্থাৎ, এই পদ্ধতিতে কেবল দুটি অঙ্ক (০ ও ১) ব্যবহৃত হয়, যেখানে প্রতিটি অঙ্ককে বিট (bit) বলা হয়।
উৎপত্তি ও ইতিহাস:
বাইনারি পদ্ধতির ধারণা প্রথম দেন জার্মান গণিতবিদ গটফ্রিড উইলহেল্ম লাইবনিজ (Gottfried Wilhelm Leibniz), ১৭০৩ সালে। পরে কম্পিউটার বিজ্ঞানের জনক জর্জ বুল (George Boole) এবং আধুনিক ইলেকট্রনিক কম্পিউটার আবিষ্কারকগণ এই পদ্ধতিকে বাস্তব রূপ দেন।
বৈশিষ্ট্য:
– বাইনারি পদ্ধতির প্রতিটি স্থানে দুটি মান থাকতে পারে: ০ বা ১।
– এটি ডিজিটাল সার্কিটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, কারণ সার্কিটে দুটি অবস্থাই থাকে—অন (১) ও অফ (০)।
– কম্পিউটারের প্রতিটি তথ্য, যেমন লেখা, ছবি, শব্দ—সবই বাইনারি কোডে রূপান্তরিত হয়ে সংরক্ষিত হয়।
দশমিক ও বাইনারি পদ্ধতির পার্থক্য:
| বিষয় | দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি | বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি | 
|---|---|---|
| ভিত্তি (Base) | ১০ | ২ | 
| ব্যবহৃত সংখ্যা | ০–৯ পর্যন্ত | ০ ও ১ | 
| উদাহরণ | ২৫, ৪৫৬, ৭৮৯০ | ১১০১, ১০১০, ১০০১ | 
| ব্যবহারের ক্ষেত্র | দৈনন্দিন গণনা | কম্পিউটার ও ডিজিটাল যন্ত্র | 
দশমিক থেকে বাইনারিতে রূপান্তর (উদাহরণ):
ধরা যাক, দশমিক সংখ্যা ৫ কে বাইনারিতে রূপান্তর করতে হবে—
৫ ÷ ২ = ভাগশেষ ১
২ ÷ ২ = ভাগশেষ ০
১ ÷ ২ = ভাগশেষ ১
অতএব, বাইনারি রূপ হবে ১০১ (উল্টো করে পড়লে)।
বাইনারি ব্যবহারের ক্ষেত্র:
– কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও ডেটা সংরক্ষণে।
– ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও সার্কিট ডিজাইনে।
– ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও এনকোডিং প্রক্রিয়ায়।
– তথ্য নিরাপত্তা, এনক্রিপশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়।
গুরুত্ব:
বাইনারি হলো আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভিত্তি। কম্পিউটারের প্রতিটি কাজ—গণনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, তথ্য সংরক্ষণ বা প্রদর্শন—সবই বাইনারি সংকেতের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
সবশেষে বলা যায়, বাইনারি হলো কম্পিউটার ভাষার মূল ভিত্তি, যেখানে ‘০’ মানে নেই (Off) এবং ‘১’ মানে আছে (On)। এই সহজ দুই প্রতীকের সমন্বয়েই আজকের জটিল ডিজিটাল বিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে।