শুকতারা কী?
 
                        শুকতারা হলো সৌরজগতের একটি গ্রহ—শুক্র (Venus), যা সূর্যোদয়ের আগে বা সূর্যাস্তের পর আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো দেখা যায়। এটি সূর্যের দ্বিতীয় গ্রহ এবং পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানকারী গ্রহ। সূর্যের আলো প্রতিফলনের ক্ষমতা বেশি হওয়ায় এটি আকাশে অত্যন্ত উজ্জ্বলভাবে জ্বলে, এজন্যই একে ‘শুকতারা’ বা ‘প্রদোষতারা’ বলা হয়। ইংরেজিতে এটি পরিচিত Morning Star বা Evening Star নামে।
গঠন ও অবস্থান:
শুক্র গ্রহ সূর্য থেকে দ্বিতীয় এবং পৃথিবী থেকে প্রায় ৪.১ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি আকার ও ভর উভয় দিক থেকেই পৃথিবীর সঙ্গে অনেকটা মিল রাখে, তাই একে “পৃথিবীর যমজ” বলা হয়। তবে এর ঘন বায়ুমণ্ডল প্রধানত কার্বন-ডাই-অক্সাইড দ্বারা গঠিত, যা প্রচণ্ড গ্রীনহাউস প্রভাব সৃষ্টি করে।
উজ্জ্বলতার কারণ:
শুক্রের ঘন বায়ুমণ্ডলে সালফিউরিক অ্যাসিড ও মেঘস্তর সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে। এই প্রতিফলনের জন্য এটি রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তুগুলোর একটি। এর উজ্জ্বলতা এমন যে কখনও কখনও এটি সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময় প্রথম বা শেষ দেখা যায়।
দেখার সময়:
– সূর্যোদয়ের আগে পূর্ব আকাশে দেখা গেলে একে শুকতারা (Morning Star) বলা হয়।
– সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে দেখা গেলে একে সন্ধ্যাতারা (Evening Star) বলা হয়।
এটি প্রতিদিন দেখা যায় না; এর অবস্থান সূর্য ও পৃথিবীর ঘূর্ণন ও আবর্তনের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য:
– ব্যাস প্রায় ১২,১০৪ কিলোমিটার (পৃথিবীর প্রায় সমান)।
– ঘূর্ণনকাল (নিজ অক্ষে) প্রায় ২৪৩ পৃথিবী দিন, যা বিপরীতমুখী।
– সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে প্রায় ২২৫ দিন।
– এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা গড়ে ৪৬৫° সেলসিয়াস, যা সৌরজগতের সবচেয়ে উষ্ণ গ্রহ।
সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক গুরুত্ব:
বাংলা সাহিত্যে ‘শুকতারা’ শব্দটি সৌন্দর্য, আশা ও নতুন সূচনার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কবি ও সাহিত্যিকরা একে ভোরের আলোর প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যেমন—
“আকাশে উদিত শুকতারা, জাগে নতুন প্রভাতের ইশারা।”
সবশেষে বলা যায়, শুকতারা আসলে কোনো তারা নয়, বরং পৃথিবীর নিকটবর্তী গ্রহ শুক্র, যা সূর্যের আলো প্রতিফলন করে আকাশে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এটি শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানে নয়, বাংলা সংস্কৃতি ও কাব্যেও সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে অমর হয়ে আছে।