জনুক্রম কাকে বলে?
 
                        জনুক্রম হলো কোনো প্রাণীর বা জীবের ডিএনএ (DNA)-তে অবস্থিত জিনগুলোর নির্দিষ্ট বিন্যাস বা ক্রম। অর্থাৎ, জীবের জিনগত উপাদান যে ধারাবাহিক ক্রমে সাজানো থাকে, সেই সজ্জাকেই জনুক্রম বলা হয়। এটি জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে এবং প্রতিটি জীবের জন্য অনন্য। ইংরেজিতে একে বলা হয় Genome Sequence বা Gene Order।
গঠন ও অবস্থান:
জনুক্রম সাধারণত ডিএনএ অণুর মধ্যে অবস্থান করে। ডিএনএ হলো দ্বি-হেলিক্স বা দ্বিগুণ সর্পিল গঠনের একটি অণু, যা নিউক্লিওটাইড দ্বারা তৈরি। এই নিউক্লিওটাইডগুলোর বিন্যাসই জনুক্রমের প্রকৃত রূপ প্রকাশ করে। প্রতিটি নিউক্লিওটাইডে থাকে চারটি বেস — অ্যাডেনিন (A), থাইমিন (T), গুয়ানিন (G) ও সাইটোসিন (C)। এই বেসগুলোর নির্দিষ্ট ক্রম অনুযায়ী জিন তৈরি হয়, এবং সেই ক্রমই জীবের বংশগত তথ্য বহন করে।
মূল উপাদানসমূহ:
– জিন (Gene): জনুক্রমের মৌলিক একক যা নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে।
– ক্রোমোজোম (Chromosome): অনেকগুলো জিন একত্রে থেকে ক্রোমোজোম তৈরি করে, যা কোষের নিউক্লিয়াসে থাকে।
– ডিএনএ সিকোয়েন্স (DNA Sequence): ডিএনএ-তে বেসগুলোর সুনির্দিষ্ট বিন্যাসই জনুক্রমের ভিত্তি।
জনুক্রমের গুরুত্ব:
জনুক্রম জীববিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, কারণ এর মাধ্যমে—
– কোনো প্রাণীর বংশগত বৈশিষ্ট্য (যেমন চোখের রং, উচ্চতা, রোগপ্রবণতা) নির্ধারণ হয়।
– জিনগত রোগ বা ত্রুটি শনাক্ত করা যায়।
– চিকিৎসাবিজ্ঞানে জিন থেরাপি বা বংশগত রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে।
– কৃষিক্ষেত্রে উন্নত জাতের ফসল বা প্রাণী উৎপাদনে সহায়ক হয়।
উদাহরণ:
মানুষের জনুক্রমে প্রায় ৩ বিলিয়ন নিউক্লিওটাইড জোড়া রয়েছে। ২০০৩ সালে সম্পন্ন হওয়া Human Genome Project-এর মাধ্যমে মানুষের সম্পূর্ণ জনুক্রম উন্মোচিত হয়। এটি মানবদেহের জিন কাঠামো, বংশগতি ও জিনগত রোগ সম্পর্কে নতুন জ্ঞান দিয়েছে।
জনুক্রম ও জিনের পার্থক্য:
| বিষয় | জনুক্রম | জিন | 
|---|---|---|
| সংজ্ঞা | ডিএনএ-তে জিনগুলোর বিন্যাস বা ক্রম | বংশগত বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী একক | 
| গঠন | বহু জিনের সমন্বয়ে তৈরি | নির্দিষ্ট প্রোটিন তৈরির নির্দেশ বহন করে | 
| কার্য | পুরো জীবের জিনগত বিন্যাস নির্দেশ করে | নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ করে | 
সবশেষে বলা যায়, জনুক্রম হলো জীবের বংশগত নির্দেশিকা—যা নির্ধারণ করে তার গঠন, আচরণ, বৃদ্ধি ও বৈশিষ্ট্য। এটি জীববিজ্ঞানের সেই সূক্ষ্ম কোড যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জীবনের বৈচিত্র্য ও উত্তরাধিকার বহন করে।