সরণ কাকে বলে?

Avatar
calender 30-10-2025

সরণ হলো কোনো বস্তুর অবস্থান পরিবর্তনের ফলে প্রারম্ভিক বিন্দু থেকে শেষ বিন্দুর সরলরেখীয় দূরত্ব ও দিক নির্দেশকারী ভেক্টর রাশি। অর্থাৎ, যখন কোনো বস্তু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়, তখন তার প্রাথমিক অবস্থান ও চূড়ান্ত অবস্থানের সংযোগরেখা দ্বারা যে রাশি প্রকাশ পায়, তাকে সরণ বলে। সরণ কেবল দূরত্ব নয়, বরং এটি দিকসহ অবস্থান পরিবর্তনের পরিমাণ নির্দেশ করে, তাই এটি একটি ভেক্টর রাশি।

এখন বিস্তারিতভাবে সরণ সম্পর্কিত তথ্য নিচে ব্যাখ্যা করা হলো—

 সংজ্ঞা ও মূল ধারণা:
যদি কোনো বস্তু A বিন্দু থেকে B বিন্দুতে যায়, তবে A ও B বিন্দুর মধ্যবর্তী সংযোগরেখা দ্বারা যে রাশি প্রকাশ পায়, সেটিই সরণ।
গাণিতিকভাবে,
সরণ (S) = চূড়ান্ত অবস্থান – প্রারম্ভিক অবস্থান
অর্থাৎ, S = x₂ – x₁

 সরণ ও দূরত্বের পার্থক্য:
দূরত্ব (Distance) এবং সরণ (Displacement) একই নয়। দূরত্ব একটি দিকবিহীন স্কেলার রাশি, আর সরণ হলো দিকসহ ভেক্টর রাশি। নিচের টেবিলে পার্থক্যটি স্পষ্টভাবে দেখানো হলো—

বিষয় দূরত্ব সরণ
রাশির ধরন স্কেলার ভেক্টর
দিক আছে কি না নেই আছে
পরিমাণ সর্বদা ধনাত্মক ধনাত্মক, ঋণাত্মক বা শূন্য হতে পারে
অর্থ মোট চলার পথের দৈর্ঘ্য প্রারম্ভিক ও চূড়ান্ত অবস্থানের সংযোগরেখা
উদাহরণ কোনো ব্যক্তি ১০ মিটার এগিয়ে ও ১০ মিটার ফিরে এলে মোট দূরত্ব ২০ মিটার কিন্তু সরণ ০ মিটার, কারণ সে আগের অবস্থানেই ফিরে এসেছে

সরণের একক ও মাত্রা:
সরণের SI একক হলো মিটার (m) এবং মাত্রা হলো [L], অর্থাৎ এটি দৈর্ঘ্যের পরিমাপক।

 সরণের দিক ও মান:
সরণের মান (magnitude) হলো প্রারম্ভিক ও চূড়ান্ত অবস্থানের মধ্যে সর্বনিম্ন সরল দূরত্ব।
সরণের দিক (direction) হলো প্রারম্ভিক বিন্দু থেকে চূড়ান্ত বিন্দুর দিকে।
তাই, কোনো বস্তুর গতিপথ বক্র বা বৃত্তাকার হলেও সরণ সবসময় প্রারম্ভিক ও চূড়ান্ত বিন্দুর মধ্যকার সরলরেখা দ্বারা নির্ধারিত হয়।

 উদাহরণ:
ধরা যাক, একটি বস্তু পূর্ব দিকে ৫ মিটার এবং পরে উত্তর দিকে ৫ মিটার চলে। তাহলে সরণ হবে—
√(৫² + ৫²) = √৫০ = ৭.০৭ মিটার
অর্থাৎ, সরণ হবে ৭.০৭ মিটার উত্তর-পূর্ব দিকে।

 বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
– সরণ কখনও মোট চলার পথের চেয়ে বেশি হতে পারে না।
– প্রারম্ভিক ও চূড়ান্ত বিন্দু একই হলে সরণ শূন্য হয়।
– সরণ সর্বদা একটি নির্দিষ্ট দিক নির্দেশ করে।

সবশেষে বলা যায়, সরণ হলো এমন একটি ভেক্টর রাশি যা কোনো বস্তুর অবস্থান পরিবর্তনের সরলরেখীয় পরিমাপ ও দিক নির্দেশ করে। এটি পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম মৌলিক ধারণা, যা গতি, বেগ ও ত্বরণের মতো ধারণার ভিত্তি তৈরি করে।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD